গভীর রাতের ভুত - bangla story

ads

test banner Web hosting

সর্বশেষ পোস্টকৃত গল্প

Post Top Ad

test banner

Post Top Ad

infaj banner

শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৭

গভীর রাতের ভুত

রাত্রি তখন প্রায় তিনটা। গা ছমছমে অন্ধকার চারদিকে। রাতের নিস্তব্ধতা চিরে মাঝে মাঝে বাদুড়ের ডানা ঝাপটানোর শব্দও শোনা যাচ্ছে। কৃষ্ণপক্ষের চাঁদটা একটু বাদেই উঠবে। শামা এইমাত্র গোসল শেষে বেরুলো । টাওয়ালে চুল ঝাড়ছে । শেষ হতে থাকা লালচে চাঁদটার জন্যেই তার এত আয়োজন। সব রহস্যের শেষবিন্দু হয়তো গোল চাঁদটাকে ঘিরেই । দুর্গোপুজোর পর থেকেই অনবরত দুঃস্বপ্ন দেখছে শামা । সবগুলোই কোন না কোন ভাবে শেষ হচ্ছে চাঁদের গায়ে । ভুত কিংবা অলৌকিক কোন কিছুতে বিশ্বাস নেই শামার । দাঁত লম্বা, নখ বড়, উল্টো পায়ের অশরীরি কিছু একটা এসে তার ঘাড় মটকে দেবে এসব গাঁজাখুরি গল্প হেসেই উড়িয়ে দেয় সে । তবুও রাতের পর রাত ভয়ংকর দুঃস্বপ্নগুলো তাকে ভাবিয়ে তুলছে । বিচ্ছিন্ন স্বপ্ন নয়। স্বপ্নগুলোর কোথাও একটা যোগসূত্র আছে । স্বপ্নের কথা বলতেই, কোথা থেকে এক তান্ত্রিক এনে হাজির করেছে তার মা । সন্ধ্যেবেলায় চারপাশে ধূপকাঠি জ্বালিয়ে কিসব মন্ত্র টন্ত্র অনবরত আওড়ে একটা তাবিজ বেঁধে দিয়েছে শামার চুলে । আর শোবার সময় বিছানার কাছে ধূপকাঠি জ্বালাতে বলে গিয়েছে । সারারাত জ্বলবে ধূপকাঠি । কিসব আজগুবি কর্মকান্ড । জ্যাঠার শ্বাসের অসুখটা হঠাৎ করেই বেড়ে যাওয়ায় রাতে শামার মা বাবা জ্যাঠার বাড়িতেই থেকে যায় । সবাই যাবার পরপরই ধূপকাঠি নিভিয়ে দেয় সে । ধোঁয়ায় অ্যালার্জি তার ।গুনগুন করে গাইতে গাইতে শোবার ঘরের বিশাল আয়নাটার সামনে বসে শামা । আয়নায় তাকাতেই তান্ত্রিকের বেঁধে দেওয়া তাবিজটা চোখে পড়ল চুলে,কি বিচ্ছিরিই না দেখাচ্ছে ।এক টানে তাবিজ টা ছিড়ে ধূপদানিতে ফেললো ।পটপট শব্দ করে তাবিজটা পুড়ছে । বিরক্ত চোখে সেদিকে তাকালো শামা ,এসব কুসংস্কারের কোন মানে হয় ? তবে একটা ব্যাপার বেশ অবাক করেছে তাকে । বিসর্জনের দিন নদীর জলে চাঁদ দেখার জন্যে একটু বেশি ঝুঁকতে গিয়ে যে নৌকা থেকে পড়ে গিয়েছিলো, সে কথা তান্ত্রিক ব্যাটা জানলো কিভাবে ? মা কেও তো কিছু বলেনি সে । ধুরো হবে হয়তো ওখানের কেউ বলে দিয়েছে । আজকে রাতেই কিছু একটা করতে হবে । এসব দুঃস্বপ্নের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে তো । একটু সাহস করে একদিন কৃষ্ণপক্ষের চাঁদটা দেখলেই সব ভয় শেষ । কৃষ্ণপক্ষের অষ্টম দিন আজ । মোটামুটি তিনটার দিকে চাঁদটা উঠবে । এমনিতেই প্রচন্ড সাহসী শামা । আজ যেনো আরো সাহস ভর করেছে। একটা চাঁদ ই তো । গোসল সেরে শামা অজান্তেই বিজয়ার শাড়িটা পড়ে । একটু ভালো করে খেয়াল করলেই হয়তো শামার চোখে পড়তো শাড়ির নিচের দিকটায় সিঁদুরের অনেকটা দাগ লেগে আছে ,অথচ বিসর্জনের দিন পানিতে পড়ে যাওয়ায় সে সিঁদুর খেলেনি । চাঁদটা উঠেই গেল, আমি আসার আগেই , দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে চাঁদটার দিকে তাকালো শামা । কিছুক্ষণ পায়চারী করার পর ছাদের রেলিংয়ে হাত রেখে দাঁড়ালো । এক দৃষ্টিতে চাঁদটা দেখছে সে ,একে একে চোখের সামনে ভাসছে বিসর্জনের দৃশ্য, পরপর দেখা দুঃস্বপ্ন গুলো ।শামা হঠাৎ করেই চমকে উঠলো আজতো অমাবশ্যা । চাঁদের আলোয় কোন ছায়া নেই । সে তারিখ দেখতে ভুল করেছে নিশ্চয়। তবে চাঁদ এলো কোথা থেকে । এইতো চাঁদটা মিলিয়ে যাচ্ছে , ঠিক স্বপ্ন দৃশ্যের মতই । সবকিছুই তবে সাজানো । ভুল তারিখ ,জ্যাঠার অসুখ,ধূপকাঠি সব ভ্রম । গোলাপজলের তীব্র গন্ধ নাকে আসলো শামার । ঠা'ম্মার মৃত্যুর সময় এমনই গন্ধ পেয়েছিলো সে । দাদাভাই যখন সুইসাইড করে তখনো এই গন্ধটা পেয়েছিলো । সব কিছুই কি কেবল কাকতালীয়? প্রচন্ড ভয়ে শামা কাঁপতে থাকে । ছাদে আর এক মুহুর্ত ও নয় । রেলিং থেকে হাত সরাতে গিয়ে শামা আবিষ্কার করে সে শূণ্য ভাসছে । চারদিকে কেবল অথই শুণ্যতা । রেলিং,ছাদ কোথাও কিছু নেই । কেবল বিজয়ার দিন যে চাঁদটা দেখতে গিয়ে জলে পড়ে গিয়েছিলো সেই চাঁদটা হাসছে । তান্ত্রিকের সাবধানবাণীটা মনে পড়লো , "বিসর্জনের স্রোতে ডুবেছো তোমাকেও গ্রাস করবে জল" । শামার চারপাশজুড়ে এরপর কেবল ভয়ংকর শূণ্যতা । কয়েকদিন আগে ব্রহ্মপুত্রের জলে ডুবিয়ে দেওয়া প্রতিমার সাথে আটকে ভাসছে লালপেড়ে সাদা শাড়ির শামা । নতুন চাঁদের ছায়াও পড়েছে তাতে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

HELLO! VISITOR

Post Top Ad

test banner