আশ্চর্য্য হত্যাকাণ্ড - bangla story

ads

test banner Web hosting

সর্বশেষ পোস্টকৃত গল্প

Post Top Ad

test banner

Post Top Ad

infaj banner

বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৭

আশ্চর্য্য হত্যাকাণ্ড

(আমার কথা)

(১)

কাল হইতেই বৃষ্টি আরম্ভ হইয়াছিল। ভাদ্রের ভরা বর্ষা, রাস্তা ঘাট কাদায় পরিপূর্ণ হইয়া গিয়াছে। খাল বিল কুলে কুলে ভরিয়া উঠিয়াছে। সন্ধ্যার পর একটু বৃষ্টি কম পড়ে, কিন্তু আকাশে মেঘের ঘটার সেই রূপ আড়ম্বরই ছিল। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরই পাড়ায় বাহির হই, কিন্তু সেই দিন সেই অন্ধকারে, কাদা পিছলের মধ্যে লণ্ঠন হাতে করিয়া বর্ষার পথ হাঁটা বড় সুবিধাজনক বোধ হইল না। কাজেই সেদিন সন্ধ্যার পর বাড়ীতে ছিলাম।

খানিক ক্ষণ একখানা বই লইয়া একটু পড়িলাম। বর্ষার সঙ্গে যেন বিষন্নতার একট ঘনিষ্ট সম্বন্ধ। যে দিন রোদ হয়, গাছ পালা, নদ নদী – সমগ্র প্রকৃতির ছবি খানি রোদে হাসিতে থাকে, সে দিন কেমন মনে একটা স্বাভাবিক প্রফুল্লতা আপনিই জাগিয়া উঠে। কিন্তু মেঘ ঝড়ের দিন কি যেন একটি বিষণ্ণ ভাব আমাদের হৃদয়ের মধ্যে ভাসাইয়া তুলে, আমরা হাজার চেষ্টা করিয়া তাহার গতি প্রতিরোধ করিতে পারি না।

যাউক, এই বর্ষায় কাজেই আমার বই ভাল লাগিল না। আমি বইখানি তুলিয়া রাখিয়া ছেলেদের পড়িবার ঘরে গিয়া বসিলাম, তাহাদের পড়াশুনাও একটু দেখিলাম, কিন্তু তাহাতেও যেন আমার প্রাণের তৃপ্তি হইল না। তখন অন্য উপায় না দেখিয়া সকাল সকাল আহারাদি শেষ করিয়া, বিছানায় গিয়া পড়িলাম।

বেশ সে দিন শীত পড়িয়াছিল, বিছানায় শুইতেই একটু তন্দ্রা আসিল। তার পর কতক্ষণ ঘুমাইয়াছিলাম মনে নাই, কিন্তু সেই গভীর রাত্রে, সহসা কে যেন আমার ঘরের দোরে দুই তিন বার জোরে জোরে আঘাত করিল। সেই আঘাতে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল বটে, কিন্তু ঘুমের ঘোর তখনও যায় নাই। আঘাতের উপর আঘাত, তার পর কে যেন কাতর কণ্ঠে ডাকিল, “অঘোর বাবু – অঘোর বাবু।” আমি কার আওয়াজ ঠিক করিতে পারিলাম না, কিন্তু বোধ হইল তাহা স্ত্রীলোকের কণ্ঠস্বর, আবার তাহা যেন ভয় পাওয়ার মত।

এত রাত্রে কোন প্রতিবেশিনী হয়ত বিপদগ্রস্ত হইয়া বাড়ী আসিয়াছে, এই ভাবিয়া আলো জ্বলিবার উদ্যোগ করিলাম। মাথার নীচে দেশলাই রাখা অভ্যাস ছিল, বিছানার ভিতর হইতেই হাত বাড়াইয়া আলো জ্বালিলাম। এবার বাহিরের দ্বারে আবার উপরি উপরি দুই তিন বার আঘাত হইল, বাহিরের ব্যক্তি বলিল – “ন বাবু শীঘ্র দোর খুলুন সর্ব্বনাশ হইয়াছে।”

আমি তাড়াতাড়ি দোর খুলিয়া ফেলিলাম। আমি ভাবিয়া ছিলাম, আমার বাসার পার্শ্বে একটি হিন্দুস্থানীর জ্যেষ্ঠ পুত্রের সংকটাপন্ন পীড়া, তাহার বাটীর হয়ত কেহ হইবে; কেন না বাহিরের স্ত্রীলোকে হিন্দুস্থানী ভাষায় কথা বার্ত্তা কহিতেছিল।

কিন্তু দোর খুলিয়া দেখিলাম, সে সেই হিন্দুস্থানীর দাসী নয়, আমার এক খুড়তুত ভাই এর পরিবারভুক্তা দাসী। আমার বাসা হইতে তাঁহার বাড়ী চার রশি দূরে।

আমার নিজের একটু পরিচয় দিই। আমি তখন দেওঘরে গিধোড়ের রাজার অধীনে চাকরী করিতাম। আমার বাসার সন্নিকটে অর্থাৎ এক মহল্লার সীমায় আমার এক জ্ঞাতি ভাই থাকিতেন। তিনি মোটা মাহিনা পাইতেন। এখন চারতিতে ইস্তফা দিয়া পীড়ার জন্য অনেক দিন ধরিয়া বৈদ্যনাথে বাস করিতেছিলেন।

দাদার বাড়ীর দাসী নুরীকে সেই রাত্রে দেখিয়া আমি বলিলাম, “নুরী কি হইয়াছে বল দেখি! কিসের সর্ব্বনশ! দাদা ভাল আছেন ত ?

নুরী কাঁদিতে কাঁদিতে মাথা চাপড়াইয়া বলিল, “ন বাবু গো! তিনি থাকিলে আর সর্ব্বনাশ কিসের ? আজ রাত্রে কে তাঁহাকে খুন করিয়া গিয়াছে!”

“খুন!! বলিস কি – খুন!! কে এমন সর্ব্বনাশ করিল – হা ভগবান -”

আমি আর অপেক্ষা করিলাম না। নুরীকে বলিলাম, – “আমার চাকর খোদাই তোর সঙ্গে যাইতেছে, তুই থানায় গিয়া খবর দে, আমি বাড়ীর দিকে যাই!”

নুরী চলিয়া গেল। আমি তাহাকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করাও প্রয়োজন বোধ করিলাম না। তখন আমার মাথার ভিতর আগুন জ্বলিতে ছিল। আমি অন্য এক চাকরকে জাগাইয়া হুঁসিয়ার থাকিতে বলিয়া ঘটনা স্থলে উপস্থিত হইলাম।

(২)

রাস্তা ঘাট কাদায় পরিপূর্ণ বলিয়া সেখানে পৌঁছিতে আমার পাঁচ সাত মিনিট অধিক বিলম্ব হইল। আমি একেবারে বাড়ীর ভিতরে গেলাম।

প্রথমেই সম্মুখে আমার ভ্রাতৃজায়া – তিনি মূর্চ্ছিতা হইয়া পড়িয়া রহিয়াছেন। তাঁহার দুই কন্যা; একটি ১০ বৎসরের, অপরটি ৭ বৎসরের, তাঁহার মুখের উপর পড়িয়া, “মা,” “মা” – “কথা কও” বলিয়া কাঁদিতেছে। দুই তিনটি দাসী পাখার বাতাস ও জলের ছিটা দিতেছে; কিছুতেই চেতনা হইতেছে না।
সে বাড়ীর ঘর দোর আমার সবই জানা ছিল, আমি একটি ঘরে ঢুকিয়া কোন তীব্র ঔষধ লইয়া তাঁহার নাসিকার কাছে ধরিলাম। ক্রমে তাঁহার চেতনা হইল, তিনি আমায় চিনিতে পারিয়া মাথার কাপড় টানিয়া দিয়, “আমার সর্ব্বনাশ হইয়াছে” বলিয়া কাঁদিতে লাগিলেন।

আমি তাঁহাকে যথাসাধ্য সান্ত্বনা করিলাম এবং ধরাধরি করিয়া লইয়া নিকটের একটি ঘরে শোয়াইলাম! বলিলাম, “আপনি চীৎকার করিয়া কান্নাকাটি করিবেন না, পুলিশের লোক এখনি আসিবে।”

গৃহিণী প্রথমেই দাসীর মুখের এই সংবাদ পান, এবং ঘরের বাহিরে আসিতে আসিতে দালানে মূর্চ্ছিতা হন। তাঁহার চীৎকারে দুই চারিটি প্রতিবেশিনী, সেই গভীরে অন্ধকারে বাড়ীর মধ্যে আসিয়া কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি তাঁহাদিগকে গৃহিণীর ঘরে পাঠাইয়া দিলাম।

নুরী এখনই ফিরিবে – কারণ আমার বাড়ী হইতে থানা অর্দ্ধঘণ্টার পথ। আমি দাদার খানসামা, রামফলকে বলিলাম, “দেখ রামফল, দাদার ঘরে এখন কেহ যেন না যায়, পুলিস যতক্ষণ না আসে, ততক্ষণ কাহারও ঐ গৃহে প্রবেশ করা উচিত না। তুমি এই দ্বারের কাছে বসিয়া থাক।”

রামফল সাহসী ও প্রভুভক্ত। সে অত্যন্ত কাঁদিতেছিল, চোখ মুছিতে মুছিতে বলিল – “যো হুকুম খোদাবন্দ।”

আমি দালানের আলোটা জ্বালিয়া দিলাম। ঘড়ীতে দেখিলাম রাত্রি প্রায় দুটা বাজে। এমন সময় নুরী আসিয়া শশব্যস্তে বলিল, “ন বাবু, পুলিশের লোক বাহিরে আসিয়াছে, আপনি বাহিরে যান।”

(৩)

পুলিশ অসিয়াছে শুনিয়া অমি তাড়াতাড়ি বাহিরে আসিলাম। দারোগা সাহেব আমাদের বাহিরের ঘরের চাতালে বসিয়া ছিলেন, আমি বাটীর ভিতর হইতে আলো আনাইলাম। দেখিলাম দারোগা স্বয়ং ও দুই জন কনস্টেবল সেই ক্ষেত্রে উপস্থিত।

থানার পূর্ব্ব দারোগার সহিত আমার আলাপ ছিল। যিনি তদারকে আসিয়াছেন, তিনি নূতন লোক। সম্প্রতি বদলী হইয়া আসিয়াছেন। আমাদের অভিবাদন ও প্রত্যাভিবাদন হইয়া গেল। দারোগা আমায় জিজ্ঞাসা করিলেন – “মহাশয় যিনি খুন হইয়াছেন, তিনি আপনার কে হন ?”

আমি বলিলাম – “আমার জ্যেঠা মহাশয়ের পুত্র।”

দারোগা বলিলেন – “মেয়ে ছেলেদের সরাইয়া দিন; আমি অকুস্থলে নিজে গিয়া একবার দেখিব।”

দারোগা বাড়ির ভিতর গিয়া হুকুম দিলেন, ‘ কেহ যেন বাড়ীর বাহিরে না যায়। সদর ও খিড়কী দ্বারে, সেই দুইজন কনষ্টেবল পাহারা দিতে লাগিল।

দারোগা রামফলকে আলো লইতে বলিলেন। যে ঘরটিতে খুন হইয়াছে সেটি দক্ষিণ-দ্বারী ঘর। দরোগা সাহেব নিজ হাতে আলো লইয়া মৃতদেহের উপর ধরিলেন। অহো! সে ভয়ানক দৃশ্য আমি এক মুহূর্ত্তের জন্য দেখিয়াছিলম, আজও তাহা আমার মনে জাগিতেছে!

মৃতদেহের গলা কাটা, তাহা হইতে অজস্র ধারে রক্ত পড়িয়া বিছানা ভাসিয়া গিয়াছে। মৃত ব্যক্তির ডান ও বাঁ দিকের বিছানার চাদরের অংশ রক্তস্রোতে লাল হইয়া গিয়াছে। চক্ষু দুটি মুদ্রিত, মুখ হাঁ করা, মুখের কি যেন একটা যাতনা চিহ্ন। মৃত ব্যক্তির গায়ে একটি মেরজাই ও একটি পিরাণ ছিল। মেরজাইয়ের বাঁ দিকের পকেটটির জেব উলটান। তাঁহার ডান হাতের মুঠার ভিতর একখানি ক্ষুর। ক্ষুর খানি তিনি ডান হাতে ধরিয়াছিলেন বটে কিন্তু তাহা মুষ্টিবদ্ধ নহে।

দারোগা বিশেষ করিয়া আহত ব্যক্তির মুখের দিকে আলো ধরিয়া, খুব সাবধানতার সহিত তিন চারবার দেখিলেন। তার পর ঘরের জিনিস পত্রের দিকে তাঁহার নজর পড়িল। সেই ঘরের আসবাবের মধ্যে একটি কাপড়ের দেরাজ, একটি কাচের আলমারি ও দুটি সিন্দুক। ঘরের জিনিস পত্র যেরূপ ভাবে যেখানে ছিল ঠিক সেইরূপই আছে। একটি টুলের উপর নানারূপ ঔষধের শিশি, মেঝের উপর একটি অর্দ্ধভাগ জলে পরিপূর্ণ উচ্ছিষ্ট গ্লাস ও ভুক্তাবশেষ দুগ্ধ-বিশিষ্ট একটি দুধের বাটী।

একটু মনোযোগের সহিত তদারকে দেরাজগুলি বিশেষ পরীক্ষা করায়, তাহার অন্য সকলগুলিই বন্ধ আছে দেখা গেল, কেবল বাঁ ধারের সকলের নীচের টানাটির চাবি খোলা। অপর গুলির চাবির জন্য অনুসন্ধান করা হইল, কিন্তু পাওয়া গেল না। গৃহিণীকে জিজ্ঞাসা করা হইল, তিনি বলিয়া পাঠাইলেন, চাবি কর্ত্তার কাছেই থাকিত, তিনি বালিসের নীচে বা কোমরে রাখিতেন। বালিসের নীচে বা কোমরের ঘুনসী দেখা হইল, চাবি পাওয়া গেল না।

চাবি না পাওয়াতে দারোগার মুখ গম্ভীর ভাব ধারণ করিল। তিনি সেই খোলা টানাটি একবার খুলিয়া পুনরায় বন্ধ করিয়া সেইখানে বসিলেন।

ঘরের পশ্চিমদিকে একটি পাশ-দোয়ার ছিল। এই দরজাটিতে সর্ব্বদা ভিতর হইতে খিল ও বাহির হইতে চাবি দেওয়া থাকিত। কখনও এ দ্বার খোলা হইত না। দারোগা সাহেব তালাটি বিশেষ করিয়া দেখিলেন। তাহাতে চাবি ঘুরানোর কোন দাগ নেই, দোরের খিলের উপর, কেবল স্থানে স্থানে ধুলা ময়লা ঝরিয়া পড়িয়াছে।

ঘর দোর বেশ করিয়া দেখা হইলে দারোগা বলিলেন – “বাবু, আমি ডাক্তার সাহেবকে খবর দিয়া আসিয়াছি। তিনি এখনই আসিবেন। মৃতদেহ পরীক্ষা না হওয়া পর্য্যন্ত আমি অন্য তদারক করিতে পারিতেছি না।”

তখন প্রভাত হইয়াছে, লূর্য্যের সুবর্ণ কিরণ ধীরে ধীরে জানালার পাশে উঁকি মারিতেছে, কিন্তু আমাদের পক্ষে কি কাল রজনীই প্রভাত হইল! জীবনে মানুষের সুদিন কুদিন দুই ঘটিয়া থাকে, কিন্তু এমন কুদিন যেন অতি শত্রুরও না ঘটে।

দারোগা বাহিরে গিয়া তাঁহার ডায়ারি পুস্তকে সমস্ত ঘটনা লিখিয়া লইলেন। মধুপুরে সৌভাগ্যক্রমে সেই সময়ে একজন ইংরাজ সিবিল ডাক্তার ছিলেন। তাঁহাকে আনিতে ভোরের গাড়িতেই দারোগা এক জনকে রওয়ানা করিয়া দিয়াছিলেন। সকালে আটটার সময় কলিকাতা হইতে যে গাড়ি আসে, তাহাতেই সাহেবের অসিবার সম্ভাবনা ছিল।

আমরা প্রতি মুহূর্ত্তে তাঁহার অপেক্ষা করিতেছিলাম। তিনি আসিয়া হুকুম দিলে তবে মৃতদেহের সৎকারের ব্যবস্থা হইবে; ঘরে বাসি মৃতদেহ রাখিতে নাই, তাহাতে এ আবার একটি শোচনীয় মৃতু।

ডাক্তার সাহেব আটটার গাড়িতেই আসিলেন। প্রায় এক ঘণ্টার উপর তাঁহার শবদেহ পরীক্ষা করিতে গেল। তিনি পকেট বুকে কতকগুলি আবশ্যকীয় ঘটনা তুলিয়া হইয়া, লাস দগ্ধ করিবার হুকুম দিলেন। দারোগাকে পাশে ডাকিয়া লইয়া গিয়া তিনি অনেকক্ষণ ধরিয়া কি কথাবার্ত্তা কহিয়া, তার পর চলিয়া গেলেন।

শবদেহের সৎকারের আয়োজন হইতে লাগিল; এদিকে দারোগা বাড়ীর সকলের জোবানবন্দী লইতে লাগিলেন। সর্ব্বপ্রথমে রামফল খানসামার সাক্ষী লওয়া হইল। রামফল যাহা বলিল তাহার মর্ম্মকথা এই, – যে বাবু খুন হইয়াছেন, তাঁহার নাম রামকালী চট্টোপাধ্যায়, তিনি আমার মনিব। বাবুর নিবাস বঙ্গলা দেশে, কোন গ্রামে বা জেলায় তাহা জানি না। তিনি পীড়ার চিকিৎসার জন্য এখানে আসিয়াছিলেন। শুনিয়াছি বৈদ্যনাথে তিনি তিন বৎসর আছেন। একথাও শুনিয়াছি যে, এর আগে তিনি মধুপুরে ছিলেন। আমি তাঁর নিকট এক বৎসরের উপর চাকরি করিতেছি। বাবু আমায় বড় ভাল বাসিতেন। শ্রাবণ মাস হইতে আমার দুই টাকা মাহিনা বাড়াইয়া দেন। এখন আমি আট টাকা মাহিনা পাই। গত রাত্রে আমি তাঁহাকে এগারটার সময় জীবিত দেখিয়াছি। আমি তাঁহার বিছানা করিয়া দিই। রাত্রি আন্দাজ এগারটার সময় তিনি গরম দুধ খান। প্রতিদিনই রাত্রে গরম দুধ খাইয়া শুইয়া থাকেন। অন্য কিছু খান না, তবে নিতান্ত ক্ষুধা হইলে দুই একখানা লুচী, একটু তরকারি ও মিছরীর গুঁড়া খান। আমি যতদিন আসিয়াছি ততকিন বাবুকে পীড়িত দেখিতেছি। তাঁহার শূল বেদনার মত কি একটা বেদনা মাঝে মাঝে ধরিত, তাহাতে তিনি বড় কাতর হইয়া পড়িতেন। মাসে একবার দুইবার এই বেদনা ধরিত। ঔষধ বার মাসই চলে। বাবু কোনরূপ নেশা করিতেন না। তামাক পর্য্যন্ত সব সময়ে খাইতেন না। যখন শূল বেদনা বাড়িত, তখন সেই সঙ্গে মাথাঘোরা ব্যারাম হইত। পীড়ার যন্ত্রণায় বাবু এক একদিন বলিতেন, “রামফল, আত্মহত্যা করিতে নাই, কিন্তু আমার আর যাতনা সহ্য হয় না।” সে অনেক দিনের অর্থাৎ দুই মাসের কথা। তারপর আর দুইবার সেই রূপ বেদনা ধরে। প্রায় মাসাবধি আর সেই বেদনা ধরে নাই। বাবুর টাকাকড়ি কোথায় থাকে আমি জানি না। তিনি চাকরদের সে সম্বন্ধে বিশ্বাস করিতেন না। গিন্নী মা হয়ত জানেন, তাঁহার চাবি ও টাকাকড়ি কোথায় থাকে। মাসে মাসে কলিকাতা হইতে তাঁহার ডাকে দুই তিন শত টাকা আসে। কখন কখন বা বাবুর এক ভাগনে দেশ হইতে টাকা আনিয়া দিয়া যান। সেই টাকায় শুনিয়াছি সংসার খরচ, চাকর বাকরের মাহিনা প্রভৃতি দেওয়া হয়। টাকাকড়ি বাঁচে কি না তা আমি জানি না। নিজ সম্পত্তি উইল করিয়াছেন কি না, সে খবর আমি রাখি না। চাকর বাকরের সে খবরে কোন দরকার নাই। মাঝে একদিন একজন উকীল বাবু আসিযাছিলেন। তিনি এক দিন এখানে ছিলেন। তাহাতে উইলের কথা শুনিয়াছি। আমার পর, বাবুর ঘরে কাল রাত্রে গিন্নী মা গিয়াছিলেন। তারপর নুরী দাসী বাবুর মশারি ফেলিতে গিয়াচিিল। নুরী ও আমি এক দালানেই শুই। সেই দালান বাবুর কামরার খুব নিকটে। রাত্রে ডাক পড়িলেই আমাদের উঠিতে হয়।”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

HELLO! VISITOR

Post Top Ad

test banner