ভোর হলো,দোর খোল - bangla story

ads

test banner Web hosting

সর্বশেষ পোস্টকৃত গল্প

Post Top Ad

test banner

Post Top Ad

infaj banner

বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৭

ভোর হলো,দোর খোল



রূপু ঘুম থেকে জেগে উঠেছে ।মোবাইলে সময় দেখলো ভোর ৪-০০টা ।সে সময় না দেখেও বলে দিতে পারতো এখন ক’টা বাজে ।কারণ একদম ছোটবেলা থেকেই সে এইসময় ঘুম থেকে ওঠে ।একটু পরই আযান পড়বে ।আযানের কথা ও সুর দু’টোই তার ভালো লাগে ।কেমন যেন অপার্থিব মনে হয় !অজানা অচেনা কোন দেশ থেকে যেন ভেসে আসে এই সুর !
‘ আচ্ছালাতু খাইরুম মিনান্ নাউম’-ঘুম থেকে নামায ভালো ।
‘ তার আরো ভালো লাগে,হাইয়া আলাস ছালা’-নামাযের জন্যে এসো ।
‘ হাইয়া আলাল ফালা’-কল্যাণের জন্যে এসো ।
এতো সুন্দর আহ্বান আর কোন সুরে আছে কিনা জানা নেই তার !
বিছানা ছেড়ে রূপু দোতলার বারান্দায় এসে দাঁড়ালো ।পৃথিবী জাগছে !আঁধার এখনো পুরোপুরি কাটেনি ।দূরের গাছগুলোকে মনে হচ্ছে আকাশের গায়ে কোন শিল্পী তুলি দিয়ে এঁকে রেখেছে !কালো আবছা রংগুলো আস্তে আস্তে সবুজ হয়ে উঠছে !ওদের বাগানে চলছে আলো আঁধারির খেলা !অল্প অল্প অন্ধকার গাছের ওপর ঝুলে রয়েছে !পাখির কিচির মিচির শোনা যাচ্ছে !জেগে উঠছে পক্ষীকূলও ।এ শব্দ ঢাকা শহরে বিরল !কিন্তু রূপুদের বাগান আর পেছনের বড় বড় গাছে এখনও কিছু পাখি দেখা যায় ।হালকা বাতাসে গা জুড়িয়ে যাচ্ছে ,গাছের পাতাগুলোও মাথা নাড়িয়ে রূপুকেই যেন অভিনন্দন জানাচ্ছে !কেমন একটা পবিত্র ভাব ছড়িয়ে আছে চারদিকে !কে বলবে এই নগরী একটু পরেই জ্বলন্ত উনুনে পরিণত হবে,হয়ে যাবে নরক !
প্রকৃতির এই স্বর্গীয় রূপ এই নগরীর বেশির ভাগ মানুষের অদেখা,অজানা ।শুধু কিছুসংখ্যক স্বাস্থ্য সচেতন ছেলে বুড়ো রমনা পার্ক,সংসদ ভবনে হাঁটতে বেরোয় এসময় ।রূপু জানে বেশির ভাগ ছেলে মেয়ে,বিশেষ করে তার বয়সী,এ যুগের তরুণ প্রজন্মের এই স্নিগ্ধ পবিত্র ভোরের সৌন্দর্যর সাথে পরিচয় নেই !তারা সারা রাত জেগে কাটিয়ে এখন গভীর ঘুমে মগ্ন !‘এরা কখনো আবৃত্তি করেনা,আমি হবো সকাল বেলার পাখি,সবার আগে কুসুমবাগে উঠব আমি ডাকি….!’
এদের বাবা মা কি কখনো রূপুর মায়ের মতো ছোটবেলায় ওদের ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে গিয়ে বলেছে,‘ভোর হলো,দোর খোল,খুকুমনি ওঠরে….?’
মানুষের মধ্য থেকে পাখি স্বভাবটা হারিয়ে গেছে !অরিদ্র নামের একটা ১৫-১৬ বছরের ছেলের সাথে নেট-এ রূপুর পরিচয় ।টিন-এজ বাচ্চা একটা ছেলে,মাত্র ও-লেভেল দেবে !সেই ছেলে সারা রাত জেগে থাকে !দুপুর ১২টিায় ঘুম ভাঙে তার,ব্রেকফাস্ট করে দুপুর ১টায়,তখন তো লাঞ্চের সময় !ঘুমুতে যায় ভোরবেলায় ।বেশির ভাগ ছেলেমেয়েই নাকি এরকম !এরা কখনো ধ্রুবতারা দেখেনি,দেখতে হয়তো চায়ও না !আশ্চর্যৃ এ প্রজন্ম !অরিদ্র পাওয়ারফুল সিডেটিভ খেয়েও রাতে ঘুমুতে পারেনা ।ওর বাবা মা ও নাকি জানে সব,তারা ওর ব্যক্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপ করে না ।অরিদ্র এসব বলেছে রূপুকে,আরও বলেছে,‘দে নো দেয়ার লিমিটস !’অবাক হয়ে আর রেগে গেছে রূপু !অরিদ্র হেসেছে !
রূপু অরিদ্রকে জিজ্ঞেস করেছে,‘তুমি কি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাম জানো?জানো নোবেল পাওয়া বাঙালী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ?কখনো পড়েছো তাঁদের লেখা ছড়া কবিতা?তোমার মা কখনো আবৃত্তি করে তোমাকে সকালবেলা ঘুম থেকে জাগায়নি?’
অরিদ্র অবাক হয়ে উত্তর দিয়েছে,‘ওঃ নো !আমি কোন বাংলা রাইম অর পোয়েট্রি পড়িনি ।আমি কীভবে এদের নাম জানবো?ইউ নো,আমি ইংলিশ মিডিয়াম স্টুডন্ট?ওঃ শীট !মম কখনো রিসাইট করে না !’
হ্যাঁ অরিদ্ররা এসব কবিতা,কবির নাম কিছুই জানে না !তারা শিশুকালে আধো আধো বোলে রিসাইট করেছে,টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল স্টার,হাউ আই ওয়ান্ডার হোয়াট ইউ আর……!এইসব হীরকের মত জ্বলজ্বলে তারা দের সাথেও কি পরিচয় আছে অরিদ্রদের?এরা কি চেনে কোনটা সপ্তর্ষি মণ্ডল,কোনটা সন্ধ্যাতারা,কালপুরুষ,অরুন্ধুতি,স্বাতী বা লুব্ধক?হয়তো ওকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেবে,আই এম নট এন এ্যাস্ট্রোলজিস্ট !এগুলো চিনতে কি জ্যোতির্বিজ্ঞানী হতে হয়?হয় না ।আসলে পরিবার পরিবেশই এই চেনাজানা আর জ্ঞানের প্রাথমিক ভিতটা গড়ে দেয় ।
যেমন দিয়েছে রূপুর ।সে নিয়ম শৃঙ্খলার মাঝে মানুষ হয়েছে ।তবে সেখানে স্বাধীনতার কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল না ।মুক্ত বিহঙ্গের মতো বিশাল অবারিত আকাশের নিচে,প্রকৃতির কোলে ছোটাছুটি করে,প্রজাপতির আনন্দ আর রং গায়ে মেখে,শৈশব কৈশোরে বেড়ে উঠেছে রূপু ।পারিবারিকভাবে অরিদ্র পায়নি সেটা ।
রূপু জেনেছে,অরিদ্রর বাবা বিরাট ব্যবসায়ী ।বেশিরভাগ সময় তার বিদেশে কাটে ।অরিদ্র তাকে কাছে পায় খুব কমই ।মা,হাউজওয়াইফ ।নামেই গৃহিণী তিনি ।গৃহকর্মে তার সময় কাটে না ।ঘরের কাজ করার জন্য প্রায় হাফ-ডজন গৃহভৃত্য আছে তাদের !স্বামী আর নিজের স্ট্যটাস রক্ষায় তিনি সমাজকর্মের নামে ক্লাব-পার্টি করে বেড়ান ।বিত্ত-বিলাসে গা ভাসিয়ে দেয়া মা-এর সান্নিধ্যও খুব একটা পায়না অরিদ্র ।একাকী সময় কাটে তার,পরিবারে বড় হয়েও পরিবারহীনভাবে ।বাবা-মা এর সময় কোথায় তাকে ছড়া শেখানো,তারা চেনানো,কোলে পিঠে নিয়ে ভালোমন্দের বোধ জাগিয়ে তোলা,স্নেহমমতায়,আদরে তিরস্কারে,উপদেশ আদেশ দিয়ে আর আবদার শুনে,মিটিয়ে,তাকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তোলার ?এরকম অরিদ্রের সংখ্যাই হয়তো এখন এ দেশের পরিবারে বেশি !কে তার খবর রাখে !অরিদ্ররা আসলেই দরিদ্র!এদের জীবনে আবার কবে সূর্য উঠবে?কবে দেখা হবে সবুজ ভোরের সাথে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

HELLO! VISITOR

Post Top Ad

test banner