অন্যরকম ভালোবাসা - bangla story

ads

test banner Web hosting

সর্বশেষ পোস্টকৃত গল্প

Post Top Ad

test banner

Post Top Ad

infaj banner

রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭

অন্যরকম ভালোবাসা


বাস থেকে শাহবাগ নেমে ভাবছি কোন দিকে যাবো। বেশিক্ষণ ভাবতে হলোনা পিছন থেকে কেউ একজন আমাকে ডাক দিল। তার ডাকে আশেপাশের অনেকেই ফিরে তাকাল।

তাকিয়ে দেখলাম আমার পরিচিত সিরাজ ভাই গত এক সপ্তাহ আগে রমনা পার্কে সিরাজ ভাইয়ের সাথে পরিচয়।

রমনা পার্কের সামনে একটা বেঞ্চে বসে আছি পাশে এসে একটা লোক বসলো, একটু ফিরে তাকালাম, কত অচেনা লোকই তো পাশে এসে বসে। কিছুক্ষণ পর সে আমার দিকে পরিচিত মানুষের মত হাত বাড়িয়ে দিয়ে ‘বলল, আমি সিরাজ।’ কি করা অগত্যা আমিও হাত বাড়িয়ে দিলাম, ভদ্রতা সূচক নাম বলতে হয় তাই বললাম, ‘ভাই আমি মফিজ।’ আসলে আমি ওনার কা- দেখে কিঞ্চিত মফিজ হয়েছিলাম তাই বলেছিলাম। সম্ভবত বোকা লোকদের মফিজ বলা হয় তাই। এরপর সে বোধহয় একটু হাসলো কিন্তু সেটা কাশিতে রুপান্তরিত করল বুঝলাম বুদ্ধিমান লোক। যেমন কিছু বুদ্ধিমান লোক বিশেষ মুহুর্তে কাশি দেয়। ইনি হয়তো তাদের দলেই। পরে অবশ্য নিজের নাম বলেছিলাম। এরপর অনেক কথা হলো ফোন নম্বর লেনদেন হলো।

এই হচ্ছেন সেই সিরাজ ভাই। আমি ওনাকে বাংলার নবাব বলেই ডাকি এতে অবশ্য তিনি খুব আমোদিত হন।
আরে রুদ্র দা বলেই বাংলার নবাব আমার ঘাড়ে চেপে বসলেন, মানে আমার ঘাড়ে একটা হাত রাখলেন। তারপর প্রশ্ন ‘কোথায় যাচ্ছেন?’
‘কোথায় আর যাবো বলেন, এইতো ডিউটিতে যাচ্ছি। তো বাংলার নবাব কোথায় যাচ্ছে?’ ‘বাংলার নবাবও ডিউটিতে যাচ্ছে সে এখন একটু রমনা পার্কে বসবে তারপর যাবে আরকি, তো তার হাতে কি সময় আছে?’ সে আমাকে প্রশ্ন করল, এই ভাবেই আমাদের কথা হতো। সেদিন কিছুক্ষণ রমনাতে বসলাম নবাবের সাথে অনেক আড্ডা হলো গল্প হলো। এরপর নবাব বিদায় নিলেন। আমি আরও কিছুক্ষণ বসবো বলে বসে রইলাম আমার অফিস সেগুন বাগিচাতেই এখান থেকে হেটে যেতে পাঁচ মিনিট লাগে। সকাল দশটাই অফিস হলেও আমি নিয়মিত দেরি করেই যায়, তেমন সমস্যা হয়না তাই।

সকালে এখনও কেউ কেউ পার্কের মধ্যে ব্যায়াম করছেন আমি ওদের দিকেই তাকিয়ে বসে আছি। এরই মধ্যে খেয়াল করলাম পাশে একটি মেয়ে এসে বসেছে। মেয়েটি অল্প একটু দুরত্ব রেকে বসেছে হয়তো আট ইঞ্চি ফাঁকা থাকতে পারে। আমি বুকের মধ্যে কেমন যেন শিহরিত হয়ে অনুভব করলাম। একটা অপরিচিত মেয়ে এত কাছে বসল এই ভেবে। পরক্ষণেই আবার একটু ভয় ভয় হলো এই মেয়েটি যদি এখন বলে কি আছে বের কর তানা হলে চিৎকার করে লোক জড়ো করবো, বলব আপনি আমার গায়ে হাত দেবার চেষ্টা করেছেন তখন বুঝবেন পাবলিকের হস্তশিল্প কেমন আরামদায়ক। এসব ভেবে উঠবো উঠবো করছি এমন সময় মেয়েটি সরল নির্লিপ্ত ভাবেই বলল, ‘ভাই লাগবে?, প্রথমে বুঝতে পারলাম না মেয়েটি কি বলছে। তাই আবার জানতে চাইলাম। এরপর মেয়েটি যা বলল তা শুনে বিশ্বাস হতে চাইল না এতসুন্দর মায়াবী চোখের একটা মেয়ে। যদিও মেয়েটার মুখে নেকাব পরা। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই মেয়েটি তার নেকাব খুলে ফেলল । মেয়েটা মোটামুটি সুন্দর কিন্তু আমার কাছে মনে হলো ওর চোখ দুটো পৃথিবীর সেরা চোখ। আর মুখটাও এতো মায়াবী। আমি প্রেমেই পড়ে গেলাম ওর।

শরীর থেকে একটা বাসন্তী ঘ্রাণ আসছে মেয়েটার থেকে, সম্ভবত ভাল একটা পারফিউম মেখেছে। মেয়েটাকে বললাম দেখুন আপনি যা ভাবছেন আমি তা নই। মেয়েটি আমার দিকে একটু করুণ চোখে তাকাল আর ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল যার অর্থ হতে পারে এমন যে ছেলেরা আবার ভাল.....!!!

মেয়েটা বুঝলো তাই সে সময় নষ্ট করতে চাইলনা, সে উঠল আমিও মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে আমার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো যতক্ষণ মেয়েটিকে দেখা যায় আমি তাকিয়েই রইলাম।

কেন জানিনা মেয়েটির সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে হলো তাই পরের দিন পার্কে আবার সেই জায়গাটিতে গিয়ে বসে থাকলাম। প্রায় দুঘণ্টা বসে থাকার পরও মেয়েটাকে পেলাম না এভাবে প্রায় পনের দিন চলে।

সেদিন সন্ধ্যার একটু আগে মাঝে মাঝে সন্ধ্যার পরও কিছুক্ষণ থাকি তখনও সন্ধ্যা হয়নি আর অল্প কিছুক্ষণ বাকি আছে। সন্ধ্যার এমন সময় একটি মেয়ে এসে পাশে বসল ঠিক প্রথম দিনের মতই। বুকের মধ্যে কেমন যেন করে উঠল কেন যেন মনে হল সেই মেয়েটিই। কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জানতে চাইলাম, ‘কেমন আছেন?; মেয়েটি কিছু না বলে আমার দিকে তাকাল তারপর চোখ ফিরিয়ে নিল, বুঝলাম এইটা হয়তো আমার কাছ থেকে সে আশা করেনি। সে ছোট করেই জবাব দিল, ‘ভাল।’

এরপর আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জিজ্ঞেস করল, ’লাগবে?’

বুঝলাম আমার কথা ওনার মনে নেই, থাকলে হয়তো জিজ্ঞেস করতো না। আমার মত প্রতিদিন কত হাজার হাজার রুদ্রকে সে মনে রাখবে। রাখতে পারেনা চাইলেও না।
‘আপনার নাম কি?’ আমার দিকে একটু তাকিয়ে সে খুব শুদ্ধ ভাষায় বলল, ‘নাম দিয়ে কি করবেন? তবুও যখন জানতে চাইছেন তখন বলছি আমার নাম প্রিয়া।’ কেন যেন মনে হল নামটা আসল না তাই জিজ্ঞেস করলাম, ‘এটা কি আসল?’
‘আমরা তো মানুষটাই আসল না, আমাদের নাম আসল হবে কিভাবে।’

‘আমি আপনাকে খুঁজছি অনেকদিন ধরেই।’ মেয়েটি আমার দিকে তাকালো তারপর প্রশ্ন করলো, ‘কেন?’
‘আজ পনেরদিন আমি আপনার জন্য এখানে অপেক্ষা করছি ভাবছি আপনি একদিন ঠিক আসবেন। অবশেষে আপনাকে পেলাম।’
ও একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো, তারপর প্রশ্ন করলো ‘কেন?’

‘আপনি প্রেম করবেন আমার সাথে?’ ও একটু বিভৎস রকম করুণ হাসল আমার দিকে তাকিয়ে।

‘দেখেন আপনার মাথার সমস্যা থাকলে আপনি চিকিৎসা করান, আমার সময়ের দাম আছে ফাও গল্প করার সময় আমার নাই। আমি টাকার বিনিময়ে শরীর বিক্রী করি। মন নিয়ে ভাবার সময় আমার নেই।; কথাটি বলেই মেয়েটি উঠতে যাচ্ছিল। আমি ওকে বললাম, ‘আমি তোমাকে ঘণ্টা চুক্তিতে টাকা দেব।’

তারপর ঘণ্টা চুক্তিতে ওর সাথে অনেকক্ষণ গল্প হলো। আমি সেদিন বেশ কিছুক্ষণ ওর সাথে গল্প করেছিলাম। রাতে ওকে খাওয়ালাম। খেতে চাচ্ছিল না, জোর করেই খাওয়ালাম। হিসাব অনুযায়ী ওকে টাকা দিলাম। তারপর এক সময় ও বিদায় নিয়ে চলে গেলো। রাত বাড়তে থাকলো। ও হয়তো আবার খুঁজতে থাকবে অন্য কোনো রুদ্রকে। যে রুদ্র আমার মত ঘণ্টাচুক্তিতে ওর সাথে গল্প করবে না। প্রয়োজন মিটিয়ে চলে যাবে। এভাবে প্রতিদিন রুদ্ররা আসবে যাবে।

আমি পার্কে বসে আছি। হটাৎ দেখলাম গাছের সাথে একটা ঘুড়ি আটকে আছে। আলো আঁধারিতে আটকে থাকা ঘুড়িটা এদিক ওদিক দুলছে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

HELLO! VISITOR

Post Top Ad

test banner