- কি রে তুই নাকি যাবি না? (নীল)
:- নাহ রে দুস্ত, আমার ছাএের পরিক্ষা আছে, তোরা যা পরেরবার না হয় যাব (রুপা)
:- কি বলিস? তোর জন্য এত বড় একটা ট্রুর এর ব্যবস্থা করলাম, আর তুই যাবি নাহ?
:- আমার জন্য মানে?
:- নাহ মানে আমাদের সবার জন্য আরকি (এইরে ধরা খেয়ে গেলাম নাতো)
:- ও ও, নাহ দুস্ত আমি পারবোনা তোরা যা, তাছাড়া বাসা থেকে এতবড় একটা ট্রুরের জন্য রাজী হবে নাহ।
:- কই কত বড়, মাএ ৭ দিন। আর তোর বাসায় আমরা সবাই বলবো তুই সব কিছু গুছিয়ে রাখিস। পরশু রাত আট টায় বাস (বলেই চলে গেল)
:- এই নীল শোন, শোনে যাহ, আরে দাড়া, যাহ বাবা চলে গেল, মনে হয় পাগলটাকে বুঝানো যাবে নাহ, এইবার তাহলে যেতেই হবে (রুপা)
,
নীল আর রুপা হল ছোটবেলার বন্ধু। একসাথে পড়ালেখা করছে সেই ছেলেবেলা থেকেই। এখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে। নীল হল বাবা মায়ের একমাএ সন্তান। বাবা মস্ত বড় ব্যবসায়ী। আর রুপা মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। বাবা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক আর মা গৃহীনি। তিন ভাই বোনের মধ্যে রুপা মেঝো। রুপার বড় বোন ভাসির্টিতে পড়ার সময় বড়োলোকের ছেলের সাথে প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করেছে। তারপর আর খুজে পাওয়া যায়নি। তাই রুপা আর প্রেম ভালবাসার দিকে পা বাড়ায় নি। যদি ও সে বুঝতে পারছে নীল তাকে ইদানীং কিছু একটা বুঝাতে চাইছে। মনে হয় ভালবাসার কথা বলতে চায়। নীলকে রুপাও ভালবাসে তবে এই ভালবাসা না পাওয়ার। কারন রুপা ভাল করেই জানে যে নীলের বাবা কখনোই এই সম্পর্ক মেনে নিবে নাহ।
এদিকে নীল তার সব বন্ধুদের রুপার কথা বলার পর
সবাই তাকে সাপোর্ট দিয়েছে বলেছে 'কোন একটা রোমান্টিক স্পটে নিয়ে গিয়ে প্রপোজ কর, ঠিক কাজে দিবে'
তাই নীল এককভাবে এই পিকনিক এর আয়োজন করেছে।
,
:- এই তানভির, রুপা কইরে? (নীল)
:- উমম, ঠিক বলতে পারলাম নাহ রে, আজ তো কলেজে ও দেখলাম নাহ (তানভির)
:- ওহ আচ্ছা,,,,,,,, তোদের মনে আছেতো কাল রাতে আটটায় বাস, সব কিছু রেডি করেছিস তো?
:- আরে মাম্মা, আমরা কি এই ফ্রি ফ্রি পিকনিক ভুলতে পারি?
:- সালা ফ্রি বলছিস কেন? আমার প্রেম যদি না হয় তাইলে তোদের সব কয়টারে আমি বঙ্গোপসাগরে ডুবাইয়া মারবো।
:- আরে মামা ওয়েট এত অস্থর হচ্ছিস কেন? আমরা আছি নাহ। তা মামা শুধু কি প্রেমই করবা নাকি হানিমুন টাও সেরে ফেলবা ;)
:- যা সালা, তোর মুখে দেখি কিছুই আটকায় নাহ (লজ্জা পেয়ে)
:- আহারে, লজ্জা পাইছে।
:- আচ্ছা বাদ দে, স্পটে গিয়ে কি রান্না করবি নাকি খাবার কিনে নিবো?
:- কি বলিস, কিনে নেবো মানে আমরা এত বড় বড় শেফ থাকতে তোর টাকা নস্ট করবো? এটা কি আমরা হতে দিতে পারি!
:- হইছে মামা আর পাম মারতে হইবো নাহ, আর তোমাদের রান্নার সমন্ধে আমার ধারনা আছে। তুমি এইবার বাড়ি যাও, আর আমি দেখি রুপার কতদূর হলো।
:- আচ্ছা তাহলে কাল রাতে দেখা হচ্ছে।
:- বায়।
এদিকে রুপা যাবে নাহ ঠিক করেছে, তাই তার বান্ধবী পলিন কে বলে দিয়েছে নীলকে জানিয়ে দিতে। কারন রুপা সরাসরি নীলকে না বলতে পারবে নাহ।
,
:- কি হইছে? (নীল)
:- কই, কিছু হয়নিতো (রুপা)
:- তাইলে পলিন বলল তুই নাকি যাবি নাহ?
:- হম
:- দেখ এইবার কিন্তু বাড়াবাড়ি করে ফেলছিস
:- হম
:- কি হম?
:- কিছুনা
:- তাইলে চল
:- নাহ আমি যাব নাহ
:- তুই যাবি
:- যাব নাহ বললাম তো
:- আমি বলছি তুই যাবি
:- না যাব নাহ
:- যাবি নাহ?
:- নাহ
:- সত্তি যাবি নাহ!
:- একবার বলছি তোর কানে যায় নাহ।
:- আচ্ছা,
এই বলে নীল পাশের টেবিলে রাখা একটা ব্লেড নিয়ে হাতের উপর টান দিলো, রক্ত গুলো ঝরে পরতে লাগলো।
:- নীল (রুপা) চিৎকার দিয়ে
:- তুই যাবি কিনা বল?
:- নীল এইসবের মানে কি?
:- তুই আমাদের সাথে না গেলে আমি এইভাবে শরিরের সমস্ত রক্ত ঝগিয়ে ফেলবো
:- নীল প্লিজ এদিকে আয় তোর রক্ত পরা থামাই আগে
:- আগে বল যাবি
আচ্ছা যাব, তুই এদিকে আয়। ইসস, তুই কেন এইরকম করিস তোদের স্টেটাস এর সাথে আমাদের যায় না।
:- এখানে আমাদের স্টেটাস আসলো কোথা থেকে? কি হয়েছে রে, আসার সময় বাবার গাড়ি দেখলাম এইরাস্তা দিয়ে যাচ্ছে,,,,,, এদিকে এসেছিলো?
রুপা কিছু না বলে নিলের হাতটা বেধে দিতে লাগলো। আর নীল একদৃষ্টিতে রুপার চোখের দিকে চেয়ে রয়েছে কি মায়া তার চোখে।
,
:- এই শরিফ, দেখতো সবাই এসেছে কিনা (নীল)
:- হম, এসেছে (শরিফ)
:- কই রুপা কই?
:- ওহ তাইতো, আচ্ছা দেখছি আমি
:- ওর মোবাইল টাও বন্ধ, কোন সমস্যা হল নাহ তো?
:- ওইতো রুপা আসতাছে
রুপাকে দেখে নীলের মনে একটা প্রশান্তির বাতাস ছুয়ে গেল।
:- কি রে এত লেট করলি, কোন সমস্যা? (নীল)
:- আর বলিস নাহ মায়ের শরিরটা ভাল নাহ, আর বাবা ও স্কুল থেকে আসতে আজ অনেক সময় নিয়েছে।
:- কি হয়েছে আন্টির?
:- একটু জ্বর ছিল, এখন সুস্থ আছে।
:- সব ঠিক আছে তো?
:- হম
:- তোর মোবাইল বন্ধ কেন?
:- ওহ শিট,,,,, মোবাইলে একফোটা চার্জ ও নাই, চার্জ দিতে ও মনে নাই।
:- আচ্ছা সমস্যা নাই, আমার কাছে পাওয়ার ব্যাংক আছে, চল।
:- হ্যা চল।
,
নীল আর রুপা পাশাপাশি যাচ্ছে জানালার পাশে রুপা তারপাশে নীল, বাতাশে রুপার চুল গুলো বারবার নীলের মুখের উপর এসে পরছে, আর নীল হারিয়ে যাচ্ছে এক সুখের অনুভূতিতে। কিছুক্ষণ পর নীল টের পেল তার কাধে মাথা রেখে রুপা ঘুমিয়ে গেছে। কোন এক বিখ্যাত ব্যক্তি বলেছেন মেয়েদের কে রাগলে আর ঘুমালে খুব মায়াবি লাগে।
আসলেই ঘুমন্ত রুপাকে খুব মায়াবি লাগছে।
,
সকালে হোটেল থেকে কেউ বের হয়নি। সারারাত জার্নি করে সবাই ক্লান্ত ছিল। সন্ধায় একসাথে বিচে হাটছিল নীল আর রুপা।
:- তোমাকে কিছু বলার ছিল (নীল)
:- বল,,,,,,,, আর তুমি করে বলছিস কেন? (রুপা)
নীল সামনে এসে হাটু গেড়ে রুপার হাত ধরে বলতে লাগলো।
জানি নাহ ভালবাসা কি
কারও জন্য এই হৃদয়ে মাঝরাতে হাহাকার করা
সকাল বিকাল তার কথা মনে পরা
সবসময় তারেই পাশে মনে হওয়া
যদি এর নাম ভালবাসা হয়, তাহলে আমি তোমাকে
খুব বেশি ভালবাসি। হবে কি আমার জীবনে চলার
পথের সাথি, একসাথে মাঝরাতে চাঁদ দেখার সহযাত্রী
হবে কি আমার অর্ধাঙ্গিনী?
,
ঠাস!!!!
:- আমি তোর কাছে অন্ততপক্ষে এইটা আশা করিনি নীল, আমি তোকে আমার বন্ধু মনে করি, খুব ভাল বন্ধু।
আর তাছাড়া আমি অনেক আগে থেকেই শুভকে ভালবাসি, আমাদের পরিবার দুইজনের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে, লেখাপড়া শেষ হলেই বিয়ে।
:- তুই শুভকে ভালবাসিস? (নীল)
:- হ্যা,,,,, খুব বেশি (রুপা)
:- কই, কখনও তো বললি নাহ!
:- প্রয়োজন মনে করিনি তাই বলিনি, আর এইব্যাপারে কথা না বলাই ভাল।
:- আইএম সরি, পারলে ক্ষমা করিস।
:- না, না, ঠিক আছে, চল হোটেলে যাই
:- তুই যা আমার ভাল লাগছে নাহ
:- শরির খারাপ?
:- না, আমি ঠিক আছি তুই যা
:- আচ্ছা, তারাতারি চলে আসিস, আকাশের অবস্থা ভাল নাহ, মনে হয় ঝড় হবে।
:- আর ঝড়! মনের ভিতর যে ঝড় বইছে তারচেয়ে বড় ঝড় আর কি আছে?
:- কিছু বললি?
:- না কিছু নাহ, তুই যা
:- আচ্ছা।
রুপা রুমে এসে ভাবতে লাগলো 'আমি কোন ভূল করলাম নাহ তে? তাছাড়া নীলকে তো আমি ও ভালবাসি। কিন্তু সমাজের প্রতিবন্ধকতায় আমাদের মেনে নিবে নাহ। বামন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়ানো যায় না'। ভাবতে ভাবতে রুপা ঘুমিয়ে গেল।
সকালে সবার চেঁচামেচি তে ঘুম ভাংগে রুপার।
:- কি হয়েছে রে এত শব্দ কিসের? (রুপা)
:- কাল রাত থেকে নীলকে পাওয়া যাচ্ছে নাহ (সাইয়ারা)
:- কি বলিস? (রুপা) আতংকে
:- হম, রাতে নাকি হোটেলে ফিরে নাই! (সাইয়ারা)
কাল সন্ধের কথা মনে পরে গেল রুপার। সে দৌড়ে কালকের সেই জায়গায় চলে গেল, পেছন পেছন সবাই আসলো।
:- কিরে এখানে আসলি কেন? আর নীলের সমন্ধে কিছু জানিস! (শরিফ)
:- কাল রাতে নীল আমাকে প্রপোজ করেছিল (রুপা)
:- তারপর (তানভির)
:- আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি (রুপা)
:- ওহ শীট! তুই জানোস তুই কী করেছিস? ও শুধুমাত্র তোকে প্রপোজ করার জন্য এই পিকনিক এর আয়োজন করেছে, আর তুই কিনা? (তানভির)
:- ওখানে কিছু মানুষের ভীর দেখা যাচ্ছে (পলিন)
:- চলতো দেখি (শরিফ)
:- ভাই, এখানে কি হয়েছে? আর এই ছেলেটা শুয়ে রয়েছে কেন?
:- ভাইসাব সক্কালবেলা কইরা মাছ দরবার গেছিলাম, জালে এই লাশটা বাইজ্জা গেছে। (জেলে)
:- লাশ (সবাই আতংকে)
:- তানভির মুখটা এইদিকে করতো দেখি (সাইয়ারা)
:- ওহ মাই গড! এতো আমাদের নীল (পলিন)
:- নীললললল (রুপা)
রুপার কান্নায় মুহুর্তের মধ্যে জায়গা টি মৃত্যুপুরিতে রুপ নিলো। সবাইর আহাজারি তে আকাশ বাতাশ ভারি হয়ে গেল।
কয়েক ঘন্টা পর নীলের বাসায় জানানো হলো, নীলের মা স্টোক করেছে, অবস্থা ভাল নাহ। তারপর দিন দুইটা এম্বোলেন্সে করে লাশ দুটি বাসায় নেওয়া হয়।
ভাবছেন লাশ দুইটা হল কিভাবে?
আসলে, সে রাতে মানষিক চাপ সইতে না পেরে রুপা ও সুইসাইড করে, আর সুইসাইড নোটে উঠে আসে রুপার মনের কথা।
,
প্রিয় নীল
জানি তুই অনেক দূরে চলে গেছিস, এইজন্য হয়তো আমিই দায়ী। আমাকে তুই ক্ষমা করবি কিনা জানি নাহ, তবে এতটুকু জেনে রাখ আমি তোকে আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসি। আমি তোকে ফিরিয়ে দিয়েছি কারন ওইদিন তোর বাবা আমাদের বাসায় এসে আমার বাবা-মা কে অনেক অপমান করে। আমাকে নাকি তারা টাকার লোভে তোর পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে। আর তাই সিদ্বান্ত নিয়েছি তোর থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাব। কিন্তু দেখ নিয়তির কি নির্মম পরিহাস, তুই আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলি। তাই আমি ও আসছি তোর কাছে, দাড়া তোর হাতটা দে। এইতো আমি আসছি।।।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
HELLO! VISITOR