মুহিত বরাবরই ভ্রমনপ্রিয় ছেলে।
ক্যাম্পাসে ছুটির লিস্টের দিকে ওর কড়া নজর। অনেক খোলামেলা টাইপের মন-মানসিকতা, ছবি তুলতে আর বন্ধুত্ব করতে প্রচণ্ড ভালবাসে। ভালবাসার প্রতি তার আগ্রহ কম, নিজের প্রতি অগাধ বিশ্বাস সে প্রেম নামক ফালতু জোয়ারে গা ভাসাবে না।
.
শীতের ছুটি পরে গেল। বেড়াতে যাওয়ার জন্য ঠিক হল সিলেটের এক বন্ধুর বাসায়, তার বড় ভাইয়ের বিয়েতে।
দিন ঘনিয়ে আসলো।
যথাসময়ে প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে বাসে উঠলো।
বাস ছাড়তে ১৫ মিনিট বাকি তাই নিজেকে একটু রিফ্রেশ করার জন্য পাশেই চায়ের দোকানে গলাটা ভেজাতে গেল।
বাসে ফিরেই দেখে তার পাশের সিটে একটি মেয়ে বসে আছে, চেহারা অস্পষ্ট কারণ তার শরীরে ও মুখে শীতকে আটকানোর জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত সচেতনতা।
.
মুহিত পাশেই বসলো আর হালকা করে মেয়েটিকে এক পলকের জন্য দেখার চেষ্টা করল। অতঃপর বাস চলল সিলেটের দিকে।
প্রায় ১ ঘণ্টা বাস চলার পর মুহিতের হাতে সিগারেটের প্যাকেট উঠে এল। আগুনের আগমনের আগেই তার মনে হল,পাশে একটি মেয়ে বসে আছে।
তাই ভদ্রতা স্বরূপ জিজ্ঞেস করল,'' এই যে, আপনার কি এহহ...এহহ প্রবলেম আছে?''
''আমি কি বলেছি আমার প্রবলেম?''
মেয়েটি ঝগড়াত্তক কণ্ঠে উত্তর করল।
আপনি তো প্রবলেম নেই তাও বলেন নি, আসলে মেয়েদের এই ব্যাপারে অ্যালার্জি থাকে কিনা তাই বললাম, অন্য কিছু নয় ম্যাডাম।
.
মনে মনে বলল, এই মেয়ে জাতির সাথে এজন্যই আমার আজও প্রেম হয় নি, বিহ্যাভ দেখে মনে হয় আমি তাকে অফার করেছি,আমিও এত সস্তা না।
.
আরও কিছুক্ষণ পর মুহিতের আওয়াজ,'' জানালাটা কি একটু খুলবেন? প্রকৃতি দেখব। ''আরে জানালার পাশে টিকেট কাটতে পারেন না? এখন শীতের দিনে জানালা খুলতে বলছেন?'' মেয়েটির উত্তর আসলো।
মুহিত এবার একটু রেগেই বলল,'' দেখুন, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আমি আপনার চেয়ে বেশি জার্নি করেছি জীবনে, তাই
আমাকে টিকেট কাটা শিখাবেন না।
আপনারা মেয়ে জাতি জানালার পাশের সিটের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন তাই আমি আগেই সিটটা ছেড়ে দিয়েছি।
,
মেয়েটি টিকেট বের করে তৎক্ষণাৎ অগোছালো হয়ে পড়ল,'' আসলে আমি সরি, আপনার সিটই জানালার পাশে।আপনি ইচ্ছে করলে বসতে পারেন।'' মুহিত বলল, বসতে চাইছি না, দয়া করে জানালাটা খুলুন।
.
জানালা খুলেই মেয়েটির চেহারা পাল্টে গেল, জোরে চিৎকার করে মুহিতকে বলল, ''এটা চা বাগান না? কত দিন পরে এলাম।'' সকালের সূর্যের আলো মেয়েটির চোখে পড়তেই সে কানটুপি, মাফলার টাইপের ৩-৪ কেজি ওজনের শীতের কাপড় মুখ থেকে সরিয়ে নিল। ''মানুষের হাসি এতো সুন্দর হয়? মুহিত মেয়েটির কাজল আঁকা চোখ আর
প্রাণবন্ত হাসি দেখে নিজেও হেসে ফেলল,।
.
মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো,''এর আগে আসেন নি?'' মেয়েটি হঠাৎ খেয়ালে উত্তর করল,''হুম কিন্তু ৫-৬ বছর আগে।'' মুহিত ও মেয়েটি বেশ কিছুক্ষণ কথা বলল।
মেয়েটির নাম তোয়া। সে প্রাইভেট ভার্সিটিতে বিবিএ করছে। সিলেটে তার আঙ্কেলের বাসায় ফান্সনে এসেছে। মুহিতও নিজের পরিচয় দিল। ঢাকা ভার্সিটির অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি বিভাগের ছাত্র আর কিছুটা যাযাবর টাইপের। বাস ২০ মিনিটের জন্য বিরতি দিল উজান-ভাটি রেস্টুরেন্টে।
.
দুজনেই একসাথে সকালের খাবার খেল। সিলেট যাওয়ার বাকি ৩ ঘণ্টা সময়ে ওরা বেশ ভাল বন্ধু হয়ে উঠল। ভাল লাগা, ডেইলি অ্যাক্টিভিটিস এসব নিয়ে কথা বলল।
.
তোয়া মুহিতের কাছে অনেক সরি বলল তার কটুকথার জন্য। মুহিত তাকে আপন বন্ধুর মতই বলল, ''its ok''. সিলেটে পৌঁছে গেলো বাস। দুজনেরই মন বেশ খারাপ। মুহিত মেয়েটির কাছে ফোন নাম্বার চাইতে গিয়েও পাড়ল না কারণ সে কোন মেয়ের
কাছে ছোট হতেই পারে না। তোয়ার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সে চুপ করে রইল। দুজনই নিজের গন্তব্যে পা বাড়াল। মুহিতের বার বার তোয়ার কাজল আঁকা চোখ, বাচ্চাদের মতো চঞ্চল হাসি, আর ওর প্রথম দিকে রাগ করা চেহারার কথা ভাবল। মুহিত আবিস্কার করলো, তোয়া খুব ভাল মনের মেয়ে।
.
মুহিতের বন্ধুর ভাইয়ের বিয়ের দিনে মুহিত কিছুটা ব্যস্ত কারণ ছবি তোলার ভার মুহিতের উপরই চাপানো। বর-কনের একসাথে ছবি তোলার জন্য মুহিতের ক্যামেরা রেডি।
ক্যামেরায় চোখ দিতেই মুহিত আর চোখ সরাতে পারল না, ''একি সত্যি নাকি আমি কল্পনা করছি?'' সাহস করে চোখের সামনে থেকে ক্যামেরা সরাল আর একটু জোরেই বলে উঠল,''তোয়া...তুমি এখানে?''
তোয়াও যেন আকাশ থেকে পড়লো আর অবাক করা মায়াবী হাসি হেসে বলল,'' আমার চাচাতো বোনের বিয়ে।'' মুহিত তড়িঘড়ি করে ক্যামেরা বন্ধুর হাতে দিয়ে তোয়াকে নিয়ে একটু দূরে গেল, বলল,'' গত দু দিন থেকে তুমি
অনেক জ্বালিয়েছ, সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছ, ফোন নাম্বারটা কি দিতে পারতে না?'' তোয়া মিষ্টি হেসে উত্তর দিল, তুমি তো চাও নি। মুহিত তোয়ার হাত ধরে সাহস নিয়ে বলল, এবার আর হারাতে দিচ্ছি না।
.
ভালবাসার প্রজাপতিকে মুহিত এবার আর আটকাতে পারলো না, এদিকে তোয়ার মায়াবী হাসি আর চোখের চাহুনিই প্রমাণ করে দেয় যে, মুহিতের প্রজাপতি নির্দ্বিধায় তোয়ার মনের আকাশে ডানা মেলতে পারে
সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৭
অচেনা প্রজাপতি অতঃপর একটি সফল যুগল
Tags
# প্রেমের গল্প
About Unknown
প্রেমের গল্প
লেবেলসমূহ:
প্রেমের গল্প
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Post Top Ad
Author Details
গল্প পড়তে বা শুনতে কে না ভালোবাসে,সেই ছোট্ট বেলায় দাদির কোলে,নানির কোলে, বা অন্য কারো কোলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বা চোখ কান খাড়া করে, বৃষ্টি বা শীতের রাতে খাতা মুরি দিয়ে অথবা চাঁদনি রাতে উঠোনে বা ছাদে পাটি বিছিয়ে গল্প কিচ্ছা শুনেনি এমন কোন মানুষ পাওয়া যাবে না।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
HELLO! VISITOR