কখনো ভাবিনি এভাবে আসবে তুমি আমার পৃথিবী রাঙিয়ে.....
সুন্দরি ললনা আসছে।বোরকা পড়া।কাজলে আকা চোখ দুটি ছাড়া কিছুই দেখা যায়না।নেকাব পরার কারনে।
ওর এই চোখ জোড়া দেখার জন্যই হয়ত প্রতিদিন এই রাস্তায় আসা
চোখ জোড়ার মায়ায় পরে গেছি মনে হয়।
হ্যা আমার নাম অনুভব...যার কথা বলছি ওর নাম নিয়তি...
পাসের দেয়ালটায় প্রতিদিনের মত আজো লুকিয়ে নিয়তিকে দেখছি....
প্রতিদিন এই রাস্তাটা দিয়ে ও টিওশন করতে যায়।রাস্তাটার একটু সামনে গেলেই একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে আমি প্রতিদিন ওর জন্য গাছটার নিচে পাথরের উপর একটা করে গোলাপ রেখে যাই।
কেন যানিনা নিয়তিও প্রতিদিন ফুলটা নিয়ে যায়।হয়ত ওর ভাল লাগে।
আজ থেকে ৬ মাস আগের কথা,নিয়তির বাবার সাথে আমার ভালোইই সম্পর্ক।আমাকে নিয়তির বাবা ছেলে হিসেবে ভালই পছন্দ করতেন।পারিবারিক ভাবে যেভাবে হয় আরকি কোনো এক ভাবে নিয়তিকে দেখতে গেছিলাম।
এক পর্যায় নিয়তিকে আমার সামনে নিয়ে আসলো।
আকাশী রঙের একটা গোল জামা পরেছে।ঘোমটা দেওয়া কপালে কয়েকটা চুল এসে মুখটাকে যেন আরো মায়াবী করে তুললো।চঞ্চল দুটি চোখ যেন হঠাৎ করেই শান্তশিষ্ট হইয়ে গেছে তা ওর চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।গালের রং লাল আভা নিয়েছে।দেখে বুঝা বাকি রইলো না,এটা লজ্জার রঙ।
আমিও আড় চোখে দেখছি,নিয়তির ঠোট কাপছে।ঘেমেও গেছে-হয়ত ভয়ে...
আমার আর আমার ফ্যামিলি নিয়তিকে খুবই পছন্দ হইয়েছে।
তাই আমাদের আলাদা ভাবে কথা বলতে দেওয়া হইয়েছে...
(এতক্ষন যাকে দেখলাম ঠিক তার বিপরীত মেয়েটি।এত চঞ্চল মেয়ে দ্বিতীয় কাওকে দেখিনি যতুটুক মনে পড়ছে)
:-ভালো আছেন?(আমি)
:-দেখুন দেখতে এসেছেন ভাল কথা,এর বেশি এগোবেন না।নইলে খবর আছে।
:-মানে আপনার কি আমাকে পছন্দ হয় নি?
:-পছন্দ হওয়া না হওয়া ফ্যাক্ট না,আমি এখন বিয়ে-টিয়ে করতে পারবোনা।আমার এসব ঝামেলা ভালো লাগেনা।
:-হুম বুঝলাম।আমি চলে গেলে অন্য কেউ কেউ আসবে,তখন কি করবেন!
:-তখনকারটা তখন দেখে নিবো।এখন আমি যা বলছি তাই ই করবেন।
:-আপনার বাবা বলেছে,আপনি একটু পাগলি টাইপের তাই আপনার কথায় কিছু মনে না করতে।
:-কি আমি পাগল?
:-না মানে আমি ঠিক সেটা বলনি,আচ্ছা আপনার নামটা যেন কি?
:-কেন আমি পাগলী এটা যানেন,আর নামটা জানেন না?
:-তুবও আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই
:-দেখুন এর বেশি আসা করবেন না।
আমার নাম নিয়তি ইসলাম।
:-বাহ খুব সুন্দর নাম।তা কি ককরছেন?
:-দেখতেই তো পাচ্চেন দাঁড়িয়ে আছি।
:-না মানে বলতে চাচ্ছি প্রফেশনালি কি করছেন?
:-ইন্টার পাস করে এখন ঘড়ে বসে আছি।তাছাড়া কিছুই করিনা।তবে একটা টিওশনি পেলে ভাল হত,বোরিং সময়টার সাথে এত যুদ্ধ করতে হতনা।
:-তাই.
(আম্মু ডাকছে যাই,আর শুনোন যা বলেছি তা যেন মনে থাকে)
কথাটা বলেই চলে গেল,ঠিক যেন পরান পাখির মত।ফুড়ুৎ করে এলো ফাড়োৎ করে চলে গেল।নিজের অজান্তেই মেয়েটা বুকের একটা হার্টবিট মিস করিয়ে দিয়ে চলে গেল।তা সে বুঝবে কি করে।
নিয়তিকে দেখা পর্যন্তই গল্পের সমাপ্তি ঘটবে ভেবেছিলাম।কারন ব্যাপারটা আর বিয়ে পর্যন্ত এগোই নি।এর মধ্যে যে নিয়তির কোনো হাত ছিলনা তাও নয়।
তবুও মনের মধ্যে নিয়তিকে নিয়ে হাজার সপ্নের দোলনায় ভাসছি।এটাই হয়ত ভালবাসা।
তারপরদিন নিয়তির বাবা আমাকে ফোন করে জানিয়ে দেয়,
দেখো বাবা আমার মেয়ে এখন বিয়ে করতে চায়না।একটা মাত্র মেয়ে জোড় ও করতে পারিনা।তোমাকে বাসায় নিয়ে গেছিলাম,ভেবেছি মেয়েটার পছন্দ হবে,কিন্ত!তুমি কিছু মনে করোনা।
:-না আংকেল আমি কিছু মনে করিনি।একটা জিনিস চাইবো দিবেন আমাকে?
:-কি বাবা
:-আসলে নিয়তির সাথে একটা জরুরী কথা ছিল,ওর ফোন নাম্বারটা একটু দিলে ভাল হত,,,
:- আচ্ছা আমি দিচ্ছি
অতঃপর পেলাম নিয়তির ফোন নাম্বারটা কিন্ত সাথে সাথে আর ফোন দেইনি।
কারন আমি ভেবে রেখিছি,ওর জন্য একটা টিওশন পেলে তবে ই নিয়তিকে জানাবো।
এই বায়নায় নিয়তিকে প্রতিদিন দেখতে পারবো।
একসময় টিওশন ও পেয়া গেলাম আর নিয়তিকেও ফোন দিয়ে জানালাম।এর পর থেকেই এই রাস্তা দিয়ে নিয়তি আসা যাওয়া করে।আর আমিও লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে যাই।মাঝে মাঝে ধরা পরে গেলে অন্য কথা বলে কাটিয়ে দেই।
ওর মত মায়াবতির প্রেমে না পরে উপায় ছিলনা।কিন্ত বলতে ভয় পেতাম।যে মেয়ে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়নি সে আবার প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হবে।
আজ ১মাস হইয়ে গেল নিয়তি এই রাস্তা দিয়ে আসেনা,হয়ত আর টিওশন করেনা।
এদিক দিয়ে মা বাবা ও বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে বিয়ে না করেও উপায় নেই,পরিস্থিতির স্বিকার হইয়ে বিয়ে করতেই হল।যে মেয়েটির সাথে বিয়ে হয়েছে তার সাথে কখনো কথা বলিনি,দেখা ও করিনি।শুধু ছবি দেখিছি।
(ভেবেছিলাম দেখে বা কথা বলে লাভ কি।যাকে ভালবাসি তাকে তো আর পাইনি)
(ফুল সয্যার রাত)
এসব কিছুই ভেবে চলছি দরজার সামনে।
দরজা নক করে ভেতরে ঢুকলাম,দেখি মেয়েটি বড় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।আমাকে দেখেই খাট থেকে নেমে সালাম করল।
:-এইযে মিঃ ১০৮ টা গোলাপ এই পর্যন্ত ওই পাথরে রেখে আসতেন,আর আজ ফুলসয্যায় কোনো ফুল আনেন নি...
:-(নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিনা)
ঘোমটা উঠিয়ে দেখি নিয়তি।
আমিতো পুরো স্টেচু হইয়ে গেলাম।এ আমি কাকে দেখিছি।নি-নি-নিয়তি তুমি?
:-হুম আমি।ভেবেছিলে কিছুই বুঝিনি।তোমার লুকিয়ে দেওয়া প্রতিটা গোলাপ আমার কাছে আছে।আমি জানতাম গোলাপ গুলো তুমি ই পাথারে রেখে যেতে। নিজের অজান্তেই আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলিছি।অন্যদিকে বাবা ও বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল তাই আমি বাবাকে তোমার কথা বললাম।বাবা রাজি হইয়েছে।
আর তোমার মা বাবাকেও আমি আমার কথা বলতে না করেছি।তোমার মা কে বলে ছিলাম অন্য কানো মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলবেন এই মেয়ের সাথেই তোর বিয়ে হচ্ছে।
সারপ্রাইজ দিব বলে।
এবার দিলামতো সারপ্রাইজ।
:-নিজেকে খুব সুখি মনে হচ্ছে।কখনো ভাবিনি নিয়তি,,,এভাবে আসবে তুমি আমার পৃথীবি রাঙিয়ে।।।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
HELLO! VISITOR