দীর্ঘকেশী - bangla story

ads

test banner Web hosting

সর্বশেষ পোস্টকৃত গল্প

Post Top Ad

test banner

Post Top Ad

infaj banner

রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৭

দীর্ঘকেশী

দীর্ঘকেশী

কলিকাতার মারকুইস স্কোয়ার নামক স্থানটি কলিকাতার পাঠকবর্গের নিকট উত্তম রূপে পরিচিত। মেছুয়াবাজার স্ট্রীটের পার্শ্বে ঐ বৃহত্ স্কোয়ার স্কুল ও কলেজের বালকদের ক্রীড়াস্থল। ঐ স্থানটির এখনও নাম আছে দীঘিপাড়। আমি যে সময়ের কথা বলিতেছি, সেই সময়ে ঐস্থনে একটি প্রকাণ্ড পুষ্করিণী ছিল, ঐ পুষ্করিণীর নাম ছিল দীঘি। ঐ দীঘিকে এখন স্কোয়ারে পরিণত করা হইয়াছে। ঐ দিঘীর চতুস্পার্শবর্তী স্থান সকল দীঘির পাড় বা দীঘির পাড়া নামে অভিহিত হইত। ঐ স্থানে যেসকল লোক বাস করিত, তাহারা সমস্তই প্রায় নিম্নশ্রেণীর মুসলমান ও চোর বদমায়েস। ঐ স্থানে কোন ভদ্র মুসলমানকে বাস করিতে আমি দেখি নাই।
ঐ পুষ্করিণীর জল অতিশয় গভীর ছিল ও উহার উত্তর-পশ্চিম অংশে একটি বৃহত্ অশ্বত্থ বৃক্ষ অর্দ্ধশায়িত অবস্থায় ঐ পুষ্করিণীর জলে আপনার প্রতিবিম্বকে প্রতিভাত করিত, এবং বর্ষাকালে অর্থাত্ যে সময়ে পুষ্করিণীর জল বর্দ্ধিত হইত সেই সময়ে ঐ বৃক্ষের দুই একটি শাখাও ঐ জলের মধ্যে অর্দ্ধনিমগ্ন অবস্থায় অবস্থিতি করিত।
এক দিবস প্রত্যুষে সংবাদ আসিল যে, ঐ দীঘির জলের মধ্যে একটি মনুষ্যমস্তক দৃষ্টিগোচর হইতেছে।
এই সংবাদ প্রাপ্ত হইয়া আমি সেই স্থানে গমন করিলাম। দেখিলাম, আলুলায়িত কেশযুক্ত একটি মনুষ্যমস্তক, পূর্ব্বকথিত বটবৃক্ষের একটি অঙ্গের নিমগ্ন শাখায় সংলগ্ন হইয়া জলের মধ্যে ভাসিতেছে।
ঐ মৃতদেহ উপরে উঠাইবার বন্দোবস্ত করিলাম। ডোম ডাকাইয়া ঐ মৃতদেহ ধীরে ধীরে তীরে আনিতে কহিলাম। উহারা আদেশ প্রতিপালন করিতে সেই অশ্বত্থ বৃক্ষের সাহায্যে সেই স্থানে গমন করিল।
ডোম ঐ মস্তক পুষ্করিণীর তীরে উঠাইয়া আনিল। দেখিলাম, উহা প্রকৃতই একটি স্ত্রীলোকের মস্তক, কোন তীক্ষ্ণধার অস্ত্রের দ্বারা উহাকে উহার দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন করা হইয়াছে। ও উহার নাক মুখ প্রভৃতি স্থানে এরূপ ভাবে আঘাত করা হইয়াছে যে ইহার মুখ দেখিয়া সহসা কেহই চিনিতে পারিবে না যে উহা কাহার মস্তক। তথাপি ঐ মস্তকটি দেখিয়া অনুমান হয় যে, ঐ স্ত্রীলোকটি কোন দরিদ্রঘরের কন্যা বা বনিতা ছিল না, ও বিশেষ রূপবতীই ছিল বলিয়া বিবেচনা হয়। মস্তকের কেশরাশি অতিশয় ঘন নিবিড় কৃষ্ণবর্ণ ও দীর্ঘ।
মস্তকটি পুষ্করিণীর ভিতর প্রাপ্ত হওয়ায় স্বভাবতই মনে হইল যে, মৃতদেহটিও নিশ্চয়ই ঐরূপে পুষ্করিণীর মধ্যে নিক্ষেপ করা হইয়াছে। কতগুলি জেলিয়াকে ধরিয়া বৃহত্ জাল সমেত ঐ পুষ্করিণীর ভিতর নামাইয়া দিলাম। পুষ্করিণীটি বহু পুরাতন ছিল, সুতরাং উহার জল নানারূপ জঙ্গলে পূর্ণ ছিল। বহু বত্সরের মধ্যে ঐ পুষ্করিণীর কোনরূপ পঙ্কোদ্ধার হইয়াছিল বলে অনুমান হয় না। জেলিয়াগণ তাহাদের সাধ্যমত ঐ পুষ্করিণীতে জাল ফেলিয়া বিশেষরূপে অনুসন্ধান করিল, কিন্তু মৃতদেহের কোনরূপ সন্ধান করিয়া উঠিতে পারিল না।
আমরা যে স্ত্রীর মুণ্ড প্রাপ্ত হইয়াছিলাম তাহা দেখিয়া কাহারও সাধ্য ছিল না যে, চিনিতে পারে উহা কাহার মস্তক। উহা যে কাহার মস্তক তাহা জানিবার উপায়ের মধ্যে কেবল একমাত্র তাহার দীর্ঘ কেশরাশি। এখন আমাদের ভরসার মধ্যে এই রহিল যে, যদি কেহ বলে - কোন দীর্ঘকেশী সুন্দরীকে পাওয়া যাইতেছে না, তাহা হইলে আমাদের কার্য্য অস্ম্পূর্ণভাবে সিদ্ধ হউক বা না হউক, অনুসন্ধান করিবার কতকটা রাস্তা হইবে।
ইহার এক ঘণ্টার পরেই ঐ মস্তক ও তাহার ঘোর কৃষ্ণবর্ণ সুদীর্ঘ কেশরাশ্র বর্ণনযুক্ত বিজ্ঞাপন মুদ্রিত হইয়া সহর ও সহরতলীর প্রত্যেক থানায় প্রেরিত হইল। উহাতে এরূপ আদেশ ছিল যে, ঢোল মোহরতের দ্বারা এই সংবাদ প্রত্যেক রাস্তায় ও প্রত্যেক গলিতে গলিতে এরূপভাবে প্রচারিত করা হউক, যেন এই বিষয় জানিতে কাহারও বাকি না থাকে।

এই সংবাদ যে দিবসে প্রচারিত হইল, সেই দিবস কোন স্ত্রীলোকেরই অনুপস্থিতি সংবাদ প্রাপ্ত হইলাম না; কিন্তু পর দিবস এক এক করিয়া তিনটি ও তত্পর দিবস দুইটি নিরুদ্দেশের সংবাদ প্রাপ্ত হইলাম।
এই পাঁচটি দীর্ঘকেশী স্ত্রীলোকের নিরুদ্দেশের সংবাদ যাহারা প্রদান করিয়াছিল, সর্বপ্রথম তাহাদিগকে আনাইয়া সেই দীর্ঘকেশযুক্ত ছিন্ন মস্তক দেখাইলাম, কেহই সবিশেষ চিনিতে পারিল না। মৃত স্ত্রীলোকের কোনরূপ সন্ধান পাওয়া যাউক বা না যাউক অপরাপর স্ত্রীলোকদের অনুসন্ধানে যখন হস্তক্ষেপ করা হইয়াছিল, তখন তাহা শেষ করিতে হইবে।

যে দিবস ঐ মস্তক পাওয়া গিয়াছিল, সেই দিবস ও তাহার পর তিন দিবস ঐরূপ গোলযোগের মধ্যে কাটিয়া গেল; পঞ্চম দিবস প্রত্যুষে খবর পাইলাম পুষ্করিণীর মধ্যে কি একটা ভাসিতেছে।
এই কলকাতা সহরের গতি, পাঠকগণ বিশেষরূপে অবগত আছেন, কোন পুলিশ কর্মচারী কোন কার্য্য উপলক্ষে কোন স্থানে দণ্ডয়মান হইলে বিনা উদ্দেশ্যে শত শত লোক তাহাকে ঘিরিয়া দাঁড়ায়। বলা বাহুল্য, আমি সেই পুষ্করিণীর ধারে গমন করিলে শত শত লোক আসিয়া সেই স্থানে উপস্থিত হইল। জলের মধ্যে ঐ পদার্থটি দেখিয়া তাহাদের মধ্যে কেহ স্থির করিতে পারিল নাযে উহা কি, কিন্তু সকলের বিশ্বাস হইল যে, কোন পদার্থ ঐ স্থানে রহিয়াছে। এই অবস্থা দেখিয় আমি সেই সমস্ত ব্যক্তিকে লক্ষ্য করিয়া কহিলাম, তোমাদের মধ্যে এরূপ কোন সাহসী ব্যক্তি আছে, যে সাঁতার দিয়া ঐ স্থানে গিয়া দেখিয়া আসিতে পারে পদার্থটি কি?
(দুইজন) সন্তরণ দিয়া ক্রমে সেই দিকে অগ্রসর হইতে লাগিল, কিন্তু উহার সন্নিকটবর্তী না হইয়া প্রায় দশ ফিট ব্যবধান হইতে উভয়েই প্রত্যাগমন করিল ও কহিল আমরা উহার নিকট যাইতে পারিলাম না ও বুঝিতে পারিলাম না যে, উহা কি? দুইজন ডুবারিকে আনিবার নিমিত্ত একটি লোক পাঠাইয়া দিলাম।
প্রায় পাঁচ মিনিট পরে উহারা আমাদিগের অতি নিকটবর্তী স্থানে আসিয়া জল উত্থিত হইল। উহারা উত্থিত হইবার সঙ্গে সঙ্গে জল কর্দ্দমময় হওয়া গেল, সুতরাং ঐ স্থানে যে কি আছে তাহার কিছুই দেখিতে পাইলাম না। উহাদিগকে জল হইতে উঠিতে দেখিয়া আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, যে পদার্থটি আমি তোমাদিগকে দেখাইয়া দিয়াছিলাম, তাহা তোমরা দেখিতে পাইয়াছ কি?
ডুবারি: হ্যাঁ, পাইযাছি।
আমি: ইহা কি পদার্থ অনুমান হয়?
ডুবারি: বোধ হইতেছে উহা মৃতদেহ।


আমার কথা শুনিয়া ডুবুরিদ্বয় বহু কষ্টে ঐ মৃতদেহটি জল হইতে তীরে উঠাইয়া দিল। দেখিলাম, উহা একটি স্ত্রীলোকের মৃতদেহ, কিন্তু বিবর্জিত মস্তক। আরও দেখিলাম, ঐ মস্তকহীন মৃতদেহের সহিত তিনটি জলপূর্ণ বৃহত্ কলসি রজ্জুদ্বারা তিন স্থানে বাঁধা আছে, কিন্তু মৃতদেহটি এরূপ ভাবে পচিয়া গিয়াছে তাহার যে স্থানে হস্ত স্পর্শিত হইতেছে, সেই স্থানে মাংস গলিয়া পড়িতেছে, ও উহা হইতে এরূপ দুর্গন্ধ বাহির হইতেছে যে, সেই স্থানে ক্ষণকালের জন্য অবস্থান করিতে পারে কাহার সাধ্য।
পূর্বেই আমরা এই পুষ্করিণীতে দেহবিহীন স্ত্রীমুণ্ড প্রাপ্ত হইয়াছিলাম, এখন মস্তকবিহীন স্ত্রীদেহ প্রাপ্ত হইয়া বুঝিতে পারিলাম, এ তাহারই দেহ।

কলিকাতার ক্যানিং স্ট্রীট পাঠকদের মধ্যে কাহারও অপরিচিত নহে। ঐ স্থান বাণিজ্য কার্যের নিমিত্ত প্রসিদ্ধ। ঐ রাস্তার দুই ধারে সারি সারি দোকান, সূর্য্যোদয়ের পর হইতে রাত্রি নয়টা দশটা পর্য্যন্ত ঐ সকল দোকানে যেমন কেনা-বেচার বিরাম নাই, সেইরূপ লোক যাতায়াতের কিছুমাত্র কমবেশী নাই। দোকানগুলি দেখিয়া নিতান্ত সামান্য দোকান বলিয়া অনুমান হয়, কিন্তু যাঁহারা উহাদিগের ভিতরের অবস্থা জানেন, তাঁহারা বলিয়া থাকেন, ঐ সকল দোকানের মূলধন কম নহে, ও উহাদিগের নিকট হইতে যে কোন দ্রব্য পরিমাণ মত চাহিবে, তত্ক্ষণাত্ তাহা প্রাপ্ত হইবে। দোকানের সুদূরবর্তী স্থানে গলির ভিতরে প্রত্যেক দোকানদারের দুই চারিটি করিয়া গুদাম আছে। ঐ সকল গুদাম দোকানের বিক্রয়দ্রব্য দ্বারা পরিপূর্ণ, যেমন কোন একটি দ্রব্য কম পড়িতেছে, অমনি ঐ সকল গুদাম হইতে ঐ সকল দ্রব্য আনাইয়া ঐ সকল স্থান পূর্ণ করিয়া রাখা হইতেছে।
ঐ স্থানের একজন ব্রাহ্মণ দোকানদারের সহিত আমার পরিচয় ছিল, পরিচয়ই বা বলি কেন, তাহার সহিত আমার বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল। সময় সময় আমি তাহার দোকানে গিয়া বসিতাম ও দোকানের বেচাকেনার অবস্থা দেখিতে দেখিতে দু এক ঘণ্টা অতিবাহিত করিতাম। যে দিবস মস্তক-বিবর্জ্জিত স্ত্রীলোকের মৃতদেহ পুষ্করিণীর মধ্য হইতে আমরা প্রাপ্ত হইয়াছিলাম, তাহার তিন চারি দিবস পরে আমি আমার সেই বন্ধুর দোকানে গমন করিলাম। তখন বেলা প্রায় শেষ হইয়া গিয়াছে, অতি অল্প মাত্রই আছে। সেই সময়ে ঐ দোকান হইতে রাস্তার অপর পার্শ্বস্থিত একটি দ্বিতল বাড়ীর ছাদের উপর হঠাত্ আমার নয়ন আকৃষ্ট হইল। দেখিলাম, ছাদের উপর দুইটি স্ত্রীলোক পদচারণ করিতেছে। একটিকে দেখিয়া অনুমান হয় যে, তাহার বয়স হইয়াছে। বোধহয়, তাহার বয়ঃক্রম ৫৫ বত্সরের কম নহে। অপরটি অল্পবয়স্কা, দেখিয়া অনুমান হয়, তাহার বয়ঃক্রম ১৬/১৭ বত্সরের অধিক হইবে না। উভয়েই আলুলায়িত কেশা। যে দীর্ঘকেশী স্ত্রীলোকের অনুসন্ধানে আমরা প্রবৃত্ত ছিলাম, ইহাদের কেশের দৈর্ঘ্যতা তাহা অপেক্ষা কোন অংশে ন্যূন নহে, দেখিতেও প্রায় সেই রূপ। উভয়েই ছাদের উপর বেড়াইতেছে, কিন্তু দূর হইতে দেখিয়া অনুমান হইতেছে, ঐ কেশরাশি তাহাদিগকে পদ স্পৃষ্ট করিয়া আছে। উভয় স্ত্রীলোকের কেশের সাদৃশ্য দেখিয়া আমার মনে হইল , যে দীর্ঘকেশীর মৃতদেহ আমরা প্রাপ্ত হইয়াছি ও যাহার অনুসন্ধানে অনর্থক কয়েক দিবস অতিবাহিত হইয়া গিয়াছে, সেই স্ত্রীলোকের সহিত এই দীর্ঘকেশী স্ত্রীলোকদ্বয়ের কোনরূপ সংশ্রব আছে কি? স্ত্রীলোকটি যে কে ছিল তাহার কোনরূপ সন্ধান কি ইহাদের নিকট হইতে কিছুমাত্র প্রাপ্ত হইব না? এরূপ হইতে পারে, সেও স্ত্রীলোক ইহাদিগের কেহ না কেহ হইবে। দুইটি স্ত্রীলোকের চুলের ভাব যখন একই রূপ দেখিতেছি, তখন বোধ হইতেছে , ইহাদিগের বংশই এইরূপ দীর্ঘকেশী ও মৃতা স্ত্রীলোকটিও হয়তো ইহাদিগের কেহ না কেহ হইবে। এরূপ স্ত্রীলোকদ্বয় যখন আমার নয়নগোচর হইল, তখন বিশেষরূপ অনুসন্ধান না করিয়া নিশ্চিন্ত থাকা আদৌ কর্ত্তব্য নহে। এইরূপ ভাবিয়া আমি আমার সেই দোকানদার বন্ধুকে কহিলাম, দেখ দেখি, স্ত্রীলোকের ঐরূপ কেশ আর কখন দেখিয়াছ কি?
বন্ধু: দেখিব না কেন? আমি ত প্রত্যহই দেখিয়া থাকি। কেন তুমি কি ইতিপূর্ব্বে ইহাদিগকে দেখ নাই?
অমি: না, দেখিলে আর তোমাকে বলিব কেন?
বন্ধু: তুমি ত প্রায়েই আমার দোকানে আসিয় থাক, আর উহারাও প্রায়েই ছাদের উপর বেড়াইতে থাকে, এ পর্য্যন্ত কি কি উহারা তোমার নয়নপথে কখন পতিত হয় নাই?
আমি: না, আজই আমি উহাদিগকে প্রথম দেখিলাম। উহারা কাহারা তুমি কিছু অবগত আছ কি?
বন্ধু: আছি। যে বাড়ীতে দুইটি দীর্ঘকেশী স্ত্রীলোক দেখিয়া তুমি হতজ্ঞান হইয়া পড়িয়াছ, ঐ বাড়িটা আমার একটি গুদাম। উহারা দোতালায় বাস করিয়া থাকে, নীচের তলার সহিত উহাদিগের কোনরূপ সংশ্রব নাই|
আমি: তাহা হইলে ঐ বাড়ীতে তুমি সর্ব্বদাই গিয়া থাক? উহাদিগের সহিত নিশ্চয়ই তোমার আলাপ-পরিচয় আছে?
বন্ধু: বন্ধুত্ব আছে।
আমি: উহারা কি লোক?
বন্ধু: ইহুদি।
আমি: এই বাড়িতে উহারা কতদিন হইতে আছে?
বন্ধু: বহুকাল আছে, বোধহয় বিশ বৎসরের কম হবে না।
আমি: উহারা কাহারা বা কি কার্য্য করিয়া থাকে?
বন্ধু: উহারা একরূপ হাফ্-বেশ্যা, গৃহস্থের ধরণে বাস করে বটে, কিন্তু বেশ্যাবৃত্তি করিতেও সঙ্কুচিত হয় না।
আমি: উহারা কয়জন এ বাড়িতে বাস করিয়া থাকে?
বন্ধু: পুরুষের মধ্যে একজন বৃদ্ধ ইহুদি। ঐ যে প্রবীণা স্ত্রীলোকটি দেখিতেছ, সে ইহাকেই আপনার স্ত্রী বলিয়া পরিচয় প্রদান করিয়া থাকে, কিন্তু উহাকে ঐ বৃদ্ধের স্ত্রী বলিয়া আমার বোধ হয় না, করণ অপর পুরুষদিগের সহিত উহার সম্মুখে আমোদ আহ্লাদ করিতেও আমি দেখিয়াছি।
আমি: অপর স্ত্রীলোকটি কে?
বন্ধু: ঐ প্রবীণার কন্যা।
আমি: উহারা কয় সহোদরা?
বন্ধু: আমি উহাদের দুই ভগ্নীকে দেখিয়াছি।
আমি: দুই ভগ্নীই কি এই বাড়িতে থাকে?
বন্ধু: যেটিকে দেখিতে পাইতেছ, সে এই বাড়ীতেই মাতার সহিত বাস করে।
আমি: উহার অপর ভগ্নী কি এখানে থাকে না?
বন্ধু: শুনিয়াছি সে কলুটোলায় থাকে। কলুটোলায় এক চামড়ার মহাজন তাহাকে রাখিয়াছে, তাহারই সহিত সে সেই স্থানে বাস করিয়া থাকে।
আমি: বৃদ্ধ ইহুদি তোমার নিকট পরিচিত?
বন্ধু: খুব পরিচিত। সে উহার ভাড়া আমাকেই প্রদান করিয়া থাকে; এরূপ অবস্থায় বোধহয় আমি বলিতে পারি যে উহারা আমার প্রজা।
আমি: ঐ বৃদ্ধকে যদি তুমি কোনরূপ উপরোধ কর, তাহলে বোধহয় সে অনায়াসে শুনিতে পারে?
বন্ধু: পারে বলিয়া তো আমার বিশ্বাস।
আমি: আমি তাহাকে একটি সামান্য উপরোধ করিতে চাই।
বন্ধু: কি উপরোধ?
আমি: সে একবার কলুটোলায় গিয়া দেখিয়া আসে যে তাহার কন্যা সেই স্থানে আছে কিনা, আর যদি না থাকে তাহা হইলে এখন সে কোথায় তাহা যদি জানিতে পারে।
বন্ধু: ইহা জানিবার প্রয়োজন কি?
আমি: বিশেষ প্রয়োজন না থাকিলে আর আমি বলিব কেন, সে যদি ঐ স্থানে না থাকে, তাহা হইলে আমার যে কি প্রয়োজন তাহার সমস্ত কথা তোমার নিকট বলিব।
বন্ধু: আর সে যদি ঐ স্থানে থাকে।
আমি: তাহা হইলেও যদি জানিতে চাও তবে বলিব|
বন্ধুর কথা শুনিয়া তাহার কর্মচারী ঐ বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করিল ও দেখিতে দেখিতে সেই বৃদ্ধকে সঙ্গে করিয়া সেই দোকানে আমার বন্ধুর নিকট আনিয়া উপস্থিত হইল। বৃদ্ধ ইহুদি সে স্থানে আসিয়াই আমার সেই বন্ধুকে কহিল, আপনি আমায় ডাকিয়াছেন?
বন্ধু: হ্যাঁ। আপনার বড় কন্যাটিকে অনেক দিবস দেখি নাই| তিনি এখন কোথায়?
বৃদ্ধ: কলুটোলায় আছে।
বন্ধু: আপনি তাকে কত দিবস দেখেন নাই?
বৃদ্ধ: প্রায় ১৫ দিবস হইল সে আমার এখানে আসিয়াছিল, সেই সময় আমি তাহাকে দেখিয়াছিলাম। তাহার পর তাহাকে আর দেখি নাই|
বন্ধু: তাহার সহিত আমার একবার সাক্ষাত্ করার বিশেষ প্রয়োজন হইয়াছে, আপনি একবার সেই স্থানে গিয়া তাহার সহিত সাক্ষাত্ করুন ও জিজ্ঞাসা করিয়া আসুন, কোন সময় আমি সেই স্থানে গমন করিলে তাহার সহিত সাক্ষাত্ হইতে পারিবে।
বৃদ্ধ: এ অতি সামান্য কথা, যে স্থানে আমার কন্যা থাকে সেই স্থান এখান হইতে বহু দূরবর্তী নহে, বোধহয় অর্দ্ধ ঘণ্টার মধ্যেই আমি সেই স্থান হইতে ফিরিয়া আসিতে পারিব।
বন্ধু: আর যদি তার সাক্ষাত্ না পান?
বৃদ্ধ: তাহা হইলেও আমি সেই সংবাদ আপনাকে প্রদান করিব।
এই বলিয়া বৃদ্ধ সেই দোকান হইতেই কলুটোলা অভিমুখে গমন করিল। মুরগিহাটা হইতে কলুটোলা বহুদূর ব্যবধান নহে, তাহা কলিকাতার পাঠকগণ অবহিত আছেন। সুতরাং তাহার প্রত্যাগমনের প্রত্যাশায় আমি সেই স্থানেই অপেক্ষা করিতে লাগিলাম। সেই সময়ে আমার বন্ধু পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, ঐ ইহুদি স্ত্রীলোকটির জন্য এত অনুসন্ধান করিতেছ কেন?
আমি: দীঘির পাড়ায় একটি স্ত্রীলোকের মৃতদেহ পাওয়া গিয়াছে, এ কথা তুমি শুন নাই কি?
বন্ধু: শুনিযাছি।
আমি: যে দুইটি স্ত্রীলোক ছাদের উপর বেড়াইতেছে, তাহাদিগের মস্তকের চুলের সহিত সাদৃশে মৃত স্ত্রীলোকটির অনুসন্ধান করিতেছি।
বন্ধু: তোমার উদ্দেশ্য এখন বুঝিতে
পারিলাম।

আমার সেই দোকানদার বন্ধুর দোকানে প্রায় এক ঘণ্টাকাল বসিয়া থাকিবার পর সেই বৃদ্ধ ইহুদি একাকী প্রত্যাগমন করিল। তাহাকে দেখিয়া আমার বন্ধু তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, 'আপনি শীঘ্রই ফিরিয়া আসিয়াছেন?"
বৃদ্ধ: হাঁ মহাশয়।
বন্ধু: আপনার কন্যার সহিত আপনার সাক্ষাত্ হইয়াছে?
বৃদ্ধ: না।
বন্ধু: কেন সাক্ষাত্ হইল না?
বৃদ্ধ: তিনি বাড়ীতে নাই।
বন্ধু: কোথায় গিয়াছে?
বৃদ্ধ: তাহা কেহ বলিতে পারিল না।
বন্ধু: এ কিরূপ কথা হইল?
বৃদ্ধ: ইহা যে কিরূপ কথা তাহা আমিও বুঝিতে পারিতেছি না।
বন্ধু: চামড়ার সওদাগরের সহিত আপনার সাক্ষাত্ হইয়াছিল?
বৃদ্ধ: হইয়াছিল।
বন্ধু: তিনি কি কহিলেন?
বৃদ্ধ: তাহার কথা শুনিয়া আমার মন নিতান্ত অস্থির হইয়া পড়িয়াছে, আমি ভালমন্দ কিছুই বুঝিয়া উঠতে পারিতেছি না।
বন্ধু: সে কেমন কথা?
বৃদ্ধ: তিনি কহিলেন, আজ কয়েক দিবস হইল তাহার সহিত আমার কন্যার কোন এক সামান্য কথা লইয়া একটু মনোবিবাদ হয়। এই কারণে রাগ করিয়া রাত্রিযোগে তিনি কোথায় চলিয়া গিয়াছেন, তিনিও রাগ করিয়া কোন সন্ধান করেন নাই, কারণ তিনি ভাবিয়াছেন যে আমার কন্যা আমার বাড়িতে আসিয়াছে।
যে স্ত্রীলোকদ্বয়ের চুলের বাহার দূর হইতে দেখিতেছিলাম, কিয়ত্ক্ষণ পরে তাহাদিগকে সঙ্গে লইয়া সেই বৃদ্ধ আমার বন্ধুর দোকানে আসিয়া উপস্থিত হইল। সেই সময় আমি উহাদিগের চুলগুচ্ছ বিশেষরূপে দর্শন করিলাম, ও বুঝিলাম এ চুলের সহিত সেই ছিন্নমস্তকের চুলের কিছুমাত্র প্রভেদ নাই। তখন বুঝিলাম, আমার উদ্দেশ্য অনেকদূর সফল হইয়াছে; এই মৃতদেহ এই বৃদ্ধ ইহুদীর জ্যেষ্ঠ কন্যার দেহ ভিন্ন অপর কাহারও নহে।
বৃদ্ধ: আপনারা আমার কন্যা সম্বন্ধে কোন বিষয় অবগত আছেন কি?
বন্ধু: না।
বৃদ্ধ: আপনার কি প্রয়োজন ছিল মহাশয়?
আমি: যা প্রয়োজন তাহা বলিবার সময় এখন নাই।
বৃদ্ধ: কেন মহাশয়?
আমি: কারণ আমার সহিত আপনার পরিচয় নাই।
বৃদ্ধ: আমার কন্যার সহিত কি আপনার পরিচয় আছে?
আমি: না, পরিচয় না থাকিলেও তাহার সহিত একবার সাক্ষাত্ করিবার চেষ্টা করিতেছিলাম।
বৃদ্ধ: কেন মহাশয়, তাহার সহিত কি প্রয়োজন ছিল, তাহা আপনাকে আমি জিজ্ঞাসা করিতে পারি কি?
আমি: পারেন।
বৃদ্ধ: তাহা হইলে অনুগ্রহপূর্ব্বক বলুন না মহাশয়।
আমি: বলিতেছি, কিন্তু বলিবার পূর্ব্বে, আমি আপনাকে দুই চারিটি কথা জিজ্ঞাসা করিতে চাহি। যদি অনুগ্রহ করিয়া আপনি তাহার উত্তর প্রদান করেন।
বৃদ্ধ: জিজ্ঞাসা করুন, আমি যাহা কিছু অবগত আছি তাহার উত্তর এখনই প্রদান করিতেছি।
আমি: যে মুসলমানটির নিকট আপনার কন্যা ছিলেন, তিনি কি কর্ম্ম করিয়া থাকেন?
বৃদ্ধ: তিনি চামড়ার ব্যবসা করিয়া থাকেন। তিনি খুব বড় মানুষ, অনেক টাকাকড়ি আছে, ও বড় মানুষরা যেরূপ ভাবে থাকে তিনিও সেইরূপভাবে দিনযাপন করিয়া থাকেন।
আমি: তাহা হইলে আপনার কন্যার সহিত ঐ চামড়াওয়ালার বিবাহ, বা নিকা প্রভৃতি কিছুই হয় নাই?
বৃদ্ধ: না।
আমি: সে বাড়িতে অন্য কেহ থাকিত?
বৃদ্ধ: চাকর চাক্রাণী ব্যতীত আর কেহই সে বাড়িতে থাকিত না। তবে রাত্রির অধিকাংশই চামড়াওয়ালা সেই স্থানে অবস্থান করিতেন।
আমি: ঐ বাড়িতে কয়টি চাকর থাকিত?
বৃদ্ধ: দুইটি দারোয়ান, একটি দাই ও একটি বাবুর্চিকেই প্রায় সর্বদা দেখিতে পাইতাম।
আমি: ঐ সমস্ত চাকরদিগের সহিত আপনার সাক্ষাত্ হইয়াছিল?
বৃদ্ধ: না কোন চাকরকেই দেখিতে পাই নাই।
আমি: আপনি বাড়ীর মধ্যে গিয়াছিলেন?
বৃদ্ধ: না, বাহির হইতে দেখিলাম, দরজায় তালাবন্ধ।
আমি: তাহা হইলে চামড়াওয়ালার সহিত আপনার কি রূপে সাক্ষাত্ হইল?
বৃদ্ধ: যখন ঐ বাড়ী তালাবন্ধ আছে দেখিলাম, তখন আমি তার চামড়ার আড়তে গমন করি। সেই স্থানে তাহার সহিত আমার সাক্ষাত্ হয়, ও সেই সময়ে আমি জানতে পারি যে, আমার কন্যা রাগ করিয়া কোথায় চলিয়া গিয়াছে।
আমি: আপনার কন্যা উহার আশ্রয় কত দিবস হইতে বাস করিতেছে?
বৃদ্ধ: প্রায় ৫/৬ মাস হইতে।

বৃদ্ধ ইহুদি আমার কথা শুনিয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করিল, 'আপনি আমার কন্যা সম্বন্ধে কোন বিষয় অবগত আছেন কি?
আমি: বোধহয় কিছু অবগত আছি।
বৃদ্ধ: কি অবগত আছেন মহাশয়?
আমি: আপনার সেই কন্যা দেখিতে খুব সুন্দরী।
বৃদ্ধ: তাহা ত সকলেই জানে। আমার এই কন্যা অপেক্ষাও অনেকে তাহাকে সুন্দরী কহিয়া থাকে।
আমি: তাহার মস্তকের চুলের খুব বাহার আছে ও খুব দীর্ঘ। আমি সে অনুমানের উপর নির্ভর করিয়া এই কথা বলিতেছি তাহা কতদূর সত্য তাহা আমি বলিতে পারি না, অথচ কোন বিষয় বিশেষরূপে অবগত না হইয়াও কোনরূপ অপ্রিয় সংবাদ দেওয়া কর্তব্ব্য নহে।
বৃদ্ধ: অপ্রিয় সংবাদ! কি অপ্রিয় সংবাদ?
আনি: আজ কয়েক দিবস অতীত হইল, কলুটোলার নিকটবর্তী দীঘির ভিতর হইতে একটি স্ত্রীলোকের মস্তক ও পরিশেষে মস্তকবিহীন একটি স্ত্রীলোকের দেহ পাওয়া যায়, একথা আপনি বোধহয় ইতিপূর্ব্বে শুনিয়া থাকিবেন?
বৃদ্ধ: না, আমি তাহা শুনি নাই। কোথায় উহা পাওয়া গিয়াছে বলিলেন?
আমি: কলুটোলার কিছুদূর পূর্ব্বে যে একটা প্রকাণ্ড পুরাতন দীঘি আছে, তাহারই মধ্যে।
বৃদ্ধ: আমি ঐ দীঘি জানি, যে স্থানে চামড়াওয়ালা আমার কন্যাকে রাখিয়াছিল, সেই স্থান থেকে ঐ দীঘি বহু দূরবর্তী নহে। যে স্ত্রীলোকের মৃতদেহ পাওয়া গিয়াছিল, তাহা কি আপনি দেখিয়াছেন?
আমি: দেখিয়াছি।
বৃদ্ধ: উহাকে দেখিতে এই কন্যার ন্যায় কি?
আমি: আপনার কন্যার চুলের ন্যায়। চুলসমেত মস্তক এখনও রক্ষিত আছে, আপনি যদি ইচ্ছা করেন, তাহা হইলে আমি উহা আপনাকে দেখাইতে পারি।
আমার কথা শুনিবামাত্র সেই বৃদ্ধ, তাহার স্ত্রী ও কন্যা আমাকে সেই স্থানে আর তিলার্দ্ধ বিলম্ব করিতে দিল না। উহাদিগের নিজের গাড়ী ছিল, তত্ক্ষণাত্ সেই গাড়ী আনিয়া সেই স্থানে উপস্থিত করিল, ও আমাকে তাহাদিগের গাড়ীতে লইয়া যে স্থানে মস্তক রক্ষিত ছিল সেই স্থানে যাইতে কহিল।

এবার আমাদিগের সর্ব্বপ্রধান কার্য্য হইল সেই চামড়াওয়ালাকে গ্রেপ্তার করা। তাহার সেই বাড়ীর ভিতর উত্তমরূপে অনুসন্ধান করা, ও বাড়ীতে যেসকল দাস-দাসী ও দারোয়ান ছিল অনুসন্ধান করিয়া তাহাদের বাহির করা।
চামড়াওয়ালা ধৃত হইল। যে ঘর ভাড়া করিয়া চামড়াওয়ালা ঐ স্ত্রীলোকটিকে রাখিয়াছিল সেই ঘরের তালা খুলিয়া সেই ঘরের ভিতর উত্তমরূপে অনুসন্ধান করা হইল, কিন্তু তাহার ভিতর আমাদের প্রয়োজন উপযোগী কিছুই প্রাপ্ত হইলাম না। চারি পাঁচ দিবসের মধ্যে ঐ ঘর উত্তমরূপে ধৌত করা হইয়াছে, ও দেওয়ালে নূতন কলিচুন ফিরান হইয়াছে। ঘরের এইরূপ অবস্থা দেখিয়া মনে আরও সন্দেহ হইল। ভাবিলাম সেই ঘরেই ঐ স্ত্রীলোককে হত্যা করা হইয়াছিল ও স্থানে স্থনে বোধহয় রক্তের চিহ্ন লাগিয়াছিল বলিয়া নূতন করিয়া উহাতে চুন ফিরান হইয়াছে।
চামড়াওয়ালা যে ঐ স্ত্রীলোকটিকে রাখিয়াছিল, তাহা স্বীকার করিল। অধিকন্তু যে সকল চাকর তাহার ঐ বাড়িতে কার্য্য করিত, অপরাপর কর্মচারীগণ এক এক করিয়া তাহাদিগের সকলকেই অনুসন্ধান করিয়া বাহির করিলেন।
ঐ সমস্ত লোক প্রাপ্ত হইবার সঙ্গে সঙ্গে ভিতরের সমস্ত অবস্থা বাহির হইয়া পড়িতে লাগিল। তখন সকলেই জানিতে পারিলেন যে ঐ স্ত্রীলোকটি যদিও চামড়াওয়ালা কর্তৃক রক্ষিত ছিল, তথাপি তাহার স্বভাবগুণে গুপ্ত ভাবে অপর লোককে তাহার ঘরে স্থান প্রদান করিত। হঠাত্ এক দিবস যে সময়ে লোকটি সেই স্ত্রীলোকের ঘরে উপবেশন করিয়া আমোদ-প্রমোদে নিযুক্ত ছিল, অথচ সেই সময় ঐ চামড়াওয়ালার সেই স্থানে আসিবার কোনও কারণ ছিল না, সেই সময়ে কোন কার্য্য উপলক্ষ্যে সেই চামড়াওয়ালা সেই স্থানে হঠাত্ উপস্থিত হইল ও সমস্ত অবস্থা স্বচক্ষে দেখিতে পাইল। সেই অপরিচিত লোকটি পলায়ন করিয়া যদিচ আপন প্রাণ রক্ষা করিল, ঐ স্ত্রীলোকটি তাহার হস্ত হইতে আর কোনরূপেই পরিত্রাণ পাইল না, ইহজীবনের নিমিত্ত তাহার ইহলীলা সেইখানেই শেষ হইয়া গেল।
চামড়াওয়ালার লোকজনের অভাব ছিল না, সুতরং রাত্রিকালে ঐ মৃত্দেহ দুই ভাগে বিভক্ত হইল, ও যেরূপ দীঘির জলের মধ্যে প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছিল, সেইরূপ ভাবে উহা সেই স্থানে নিক্ষিপ্ত হইয়াছিল।
চামড়ওয়ালা ও তাহার সাহায্যকারী সমস্ত লোকই ধৃত হইল, কিন্তু উহার অনেক অর্থের জোর ছিল, সাক্ষীগণ ক্রমে ক্রমে তাহার হস্তগত হইয়া পড়িল, ও হাইকোর্টের প্রধান প্রধান কৌন্সিলগণের বুদ্ধিবলে ও সাক্ষীগণের মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করায় সে যাত্রা বিচারালয় থেকে নিষ্কৃতি লাভ করিল।

প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়
প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৫৫-১৯৪৭) বহু বছর পুলিশে কাজ করেছিলেন। নিজের পুলিশী অভিজ্ঞতা থেকে উনি ওঁর দারোগার দপ্তর শুরু করেন। মাসে মাসে পত্রিকাটি বার হত। সেখানেই ১৩১৩ সালে দীর্ঘকেশী কাহিনীটি প্রকাশিত হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

HELLO! VISITOR

Post Top Ad

test banner