বিকেল থেকেই মনটা খুব অস্হির হয়ে ছিল।রাত নয়টার দিকে আব্বুর সাথে ফোনে কথা হল।ফোনটা রিসিভ করেই "আব্বু..." বলেই চুপ হয়ে গেলাম।আর কোন কিছু বলার মত মানসিকতা ছিলনা তখন।ফোনের ওপাশ থেকে আব্বুর হাসির শব্দটা শুনে মনটা একটু শান্ত হল।আর সেই মধুরতম মিষ্টি হাসির সাথে শুনতে পেলাম পৃথিবীর আরেকটি মধুরতম শব্দ-"জ্বি আব্বাজান......"
এখন তুমি কেমন আছ আব্বু?-কথাটা জিজ্ঞাসা করতেই আব্বুর ঝটপট উত্তর: "আমি!.. একদম ফার্স্টক্লাস!"
কথাটা বলেই আরেকবার হেসে উঠল আব্বু।
একটা চাপা গুমোট কষ্ট আমার গলাটাকে রুদ্ধ করে ছিল,তাই ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও আব্বু সাথে কোন কথাই বলতে পারছিলাম না।
ওপাশ থেকে আব্বুই বলে উঠল : "আমর আব্বাটা কি রাতে ভাত খেয়েছে?"(এই "আব্বা"টা হল-আমি।বেশিরভাগ সময়ই আব্বু আমাকে "আব্বু","আব্বা","আব্বাজান","বেটি" অথবা "বেটুন"-এগুলো বলে আদর করে ডাকে।)
অনেক কষ্টে কান্না চেপে আমি বললাম যে- "না।"
আরেকটু জোরে হেসে উঠে আব্বু বলল যে- "কেন?আমার বেটুনটার কি মন খারাপ নাকি!বোকা বেটুন আমার..."(বেটুন শব্দটা খুব সম্ভবত: "বেটি" অর্থাৎ "মেয়ে" শব্দটার আদরের কোন ভার্সন।আমার আব্বু যখনই আমার সাথে খুব আদর করে কথা বলে তখনই আব্বু আমাকে "বেটুন" বলে ডাকে)
আব্বুর এই অতিরিক্ত আদুরে ডাকটা শুনেই হয়ত: এতক্ষণ গলার কাছে আটকে থাকা জমাট কষ্টটা বাঁধ ভেঙ্গে নাফাকুম ঝর্ণার মত আমার দু'চোখ বেয়ে বইতে শুরু করল।কাঁদতে কাঁদতেই আমি বললাম যে-"আব্বু,সত্যি করে বল,তোমার শরীরটা এখন কেমন?"
আমার সদা হাস্যময়ী আব্বু হাসতে হাসতেই বলল যে-"ধুর!!!আমার আবার কি হবে!তবে মনে হয়,একটা বাইপাস সার্জারী করতে হবে আর কি!...সিম্পল ব্যাপার..."
"মনে হয়"-কথাটা আসলে ঠিক না।আমি যেন টেনশন না করি সেজন্য কথাটাকে হালকা করার জন্য আব্বু "মনে হয়" শব্দটা ব্যবহার করেছে।আব্বুকে এবার সত্যি সত্যিই বাইপাস সার্জারী করাতে হবে।আমার আব্বু এখন হসপিটালে।আজকে আব্বুর এনজিওগ্রাম করানো হয়েছে।রিপোর্ট বেশি ভাল না।আমার ছোট বোন জুঁথীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই এই মানুষটার একবার হার্ট এ্যাটাক হয়েছিল।বছর দুয়েক আগে রিং ও পড়ানো হয়েছে।কিন্তু এখন আবার সেখানে ব্লক ধরা পড়েছে।তিনটা ব্লকের কন্ডিশনই খুব খারাপ।অথচ: এগুলো জেনেও অবলীলায় হসপিটালের সি.সি.ইউ. তে শুয়ে থাকা মানুষটি আমাকে উল্টা স্বান্ত্বনা দিয়ে কথা বলে যাচ্ছে।
খুব কষ্টে কান্নাটাকে একটু চেপে,আব্বুকে একটা চুমচুমি দিয়ে বললাম-"লাভ ইউ আব্বু,মিস্ ইউ।"
আব্বুও আমাকে পাল্টা চুমচুমি দিয়ে বলল-"বোকা বেটুন আমার!আজ রাতে যে ভাত খেতে চাবে না,এটা আমি জানতাম।ডিপ ফ্রিজটা খুলে দেখ।ভাত খাওয়ার পরে খাবে কিন্তু!তোমাকে জোর করে ভাত খাওয়ানোর জন্যই কালকে ওটা কিনে রেখেছিলাম।...."
আব্বুর সাথে কথাগুলো বলতে বলতেই ডাক্তার চলে আসায় আব্বু ফোনটা রেখে দিল।
অফিস থেকে আসার পর সেই সন্ধ্যা থেকেই আর কিছু খাওয়া হয়নি আজ।তাই মন খারাপ নিয়েই ফ্রিজ খুলে অনেকগুলো আইসক্রিম খেলাম।হসপিটালে আব্বুর সাথে আম্মু আছে।তারপরেও কেন যেন ভাল লাগছে না।পাশে বসে,হাতটা ধরে আব্বুকে খুব আদর করে দিতে ইচ্ছা করছে....
রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭
আব্বু -আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Post Top Ad
Author Details
গল্প পড়তে বা শুনতে কে না ভালোবাসে,সেই ছোট্ট বেলায় দাদির কোলে,নানির কোলে, বা অন্য কারো কোলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বা চোখ কান খাড়া করে, বৃষ্টি বা শীতের রাতে খাতা মুরি দিয়ে অথবা চাঁদনি রাতে উঠোনে বা ছাদে পাটি বিছিয়ে গল্প কিচ্ছা শুনেনি এমন কোন মানুষ পাওয়া যাবে না।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
HELLO! VISITOR