অনিম ও ইরা চাচাতো ভাই-বোন। ওরা পাশা পাশি বাসায় থাকে যার ফলে ছোট থেকে একসাথেই বড় হয়েছে। ইরা অনিম কে খুব ভালবাসতো। অনিম দেখতে ততোটা সুন্দর না হলেও ইরার কাছে অনিমেই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পুরুষ। ইরা অনিম কে ভালবাসে এই ব্যাপারটা ইরা ছাড়া আর কেউ জনতো না। অনিম কে সে বলে নি কারন মেয়েরা কখনো আগে বলে না। তাই অনিমের প্রতি ইরার গভীর ভালবাসা তার মনের মধ্যেই লুকিয়ে রাখলো। এই ভাবেই চলতে থাকে ওদের জীবন।
একবার গ্রীষ্মের ছুটিতে ওরা ফুফুর বাড়ি বেড়াতে যায়। সেখানে অনিমের একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। মেয়েটার নাম বর্ষা, সে দেখতে অনেক সুন্দর পরীর মতো হয়তো বা পরীর থেকেও সুন্দর। আর সে কথাও বলে অনেক সুন্দর করে। প্রথম দেখার পরেই অনিম সেই মেয়েটার প্রেমে পরে যায়। কিন্তু অনিম তার তার ভালবাসার বিষয়টা কারও সাথে শেয়ার করেনি নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রাখে। এমন কি তার সব চাইতে কাছের বন্ধু ইরা কেউ না।
একদিন অনিম বর্ষা কে নিয়ে ডায়রি লেখছিল, তখন ইরা তা দেখে ফেলে। বর্ষা নামটা দেখে ইরা খুব কষ্ট পায়। তবুও সে কিছু বলে নি, কষ্ট গুলো নিজের মনে চেপে একটা মলিন হাঁসি দিয়ে অনিম কে বললো "তুই কি ফুফুর বাড়ির সেই মেয়েটার প্রেমে পড়েছিস"?
অমিম হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। কথাটা শুনে ইরার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। তবুও অনিম কে ইরা বললো "যদি কোন সাহায্য লাগে তো আমাকে বলিস আমি সব সময় তোর পাশে আছি "।
কিছুদিন পর........
অনিম একটা মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলছিল। কথা শেষ করার পর ইরা তাকে জিজ্ঞেস করলো "কিরে কার সাথে এতো কথা বলিস?"
অনিম একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে বললো "বর্ষা"।
অনিম কার কাছ থেকে যেন বর্ষার ফোন নাম্বারটা জোগাড় করেছে। তখন থেকেই বর্ষার সাথে অনিমের নিয়মিত ফোনে কথা হতো আর ফেইসবুক তো আছেই। অনিম আর বর্ষার প্রেমের ব্যাপার একমাত্র ইরাই জানতো। তাই অনিম ইরাকে রিকোয়েস্ট করলো যাতে তাদের প্রেমের ব্যাপার টা কাউকে না বলতে। ইরা অনিম কে কথা দিয়ে মনে মনে বললো " তোকে ভালবেসে আমি না হয় কষ্টের সাগরে ডুবে গেলাম, তবুও আমি চাই তুই ভাল থাক তোর ভালবাসার মানুষটার সাথে "।
এই ভাবে কেটে গেল অনেক গুলো দিন। একদিন অনিম ইরার কাছে এসে খুব কান্না কাটি করছে।
ইরাঃ (অবাক হয়ে) কিরে অনিম, কি হয়েছে তোর?
অনিমঃ (কাঁদতে কাঁদতে) বর্ষা আমার যাথে ব্রেকআপ করেছে।
ইরাঃ কিন্তু কেন?
অনিমঃ ওর আগে আর একটা ছেলের সাথে রিলেশন ছিল। মেয়েটা ভাল না।
(বলেই অনিম আবার কাঁদতে লাগলো)
তখন কাঁদতে কাঁদতে অনিমের চোখ গেল ইরার দিকে। দেখলো ইরা ও কাদঁছে। ইরার চোখে পানি দেখে অনিম অবাক হয়ে বললো
"কিরে ইরা তুই কাঁদছিস কেন?"
ইরাঃ যাকে সব চাইতে বেশি ভালবাসি সে যখন চোখের সামনে এই ভাবে কষ্ট পায় তবে আমি কি কাঁদবো না?
অনিমঃ (অবাক হয়ে) ভালবাসিস মানে?কাকে ভালবাসিস???
ইরাঃ (একটু লজ্জা আর একটু রাগ মেশানো কন্ঠে) তোকে ভালবাসি রে বুদ্ধু। কোনদিন ও তো বোঝার চেষ্টা করিস নি।
অনিমঃ তুই আগে বলিস নি কেন? আগে বললে আমি কি জীবনে বর্ষা নামের ভুলে পা দিতাম?
ইরাঃ গাঁধা!! মেয়েরা কি কোন দিন আগে বলে শুনেছিস?
অনিমঃ তা শুনিনি।
ইরাঃ তো????
বলার সাথে সাথেই ইরা নিচে তাকিয়ে দেখে অনিম হাঁটু ঘেরে বসে ইরার দিকে তাকিয়ে বলছে
"ইরা আমি তোমায় অনেক ভালবাসি"
অনিমের মুখে তুমি শব্দটি শুনে ইরার চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে থাকে। এই অশ্রু যেন তার প্রথম প্রেম ফিরে পাবার অশ্রু।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
HELLO! VISITOR