আকাশটা গুমোট বেধে আছে। হয়তো কিছুক্ষণের মধেই বৃষ্টি নামবে। ছাদের উপর দাঁড়িয়ে আছি। শীলাপুকে দেখলাম, আমাদের বাড়ির দিকেই আসছে। দুজনার চোখাচোখি হলো। আমি শীলা আপুকে সংক্ষেপে শীলাপু ডাকি। শীলাপু আমার থেকে বছর খানেকের বড় হবে। আমাদের বাড়ির পাশেই ওদের বাড়ি। শীলাপু দেখতে একদম লক্ষী একটা মেয়ের মত। দেখতে আহামরি না হলেও আহামরিদের চাইতেও কোনো অংশে কম নয়। আমার খুব ভাল লাগে শীলাপুকে। কিন্তু ভাল লাগলেও সেকথা তো আর বলতে পারিনা। আর বলবই বা কি করে। শীলাপু তো আমার থেকে বয়সে বড় তাছাড়া আমি সবসময় শীলাপু বলে ডাকি। শীলাপু ছাদে এলো।
-এই আহম্মক একা একা ছাদে দাঁড়িয়ে কি করিস?
-তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম শীলাপু।
-ইশ আমার জন্য অপেক্ষা করছিল, গাধা।
-শীলাপু তুই ঘরে যা, বৃষ্টি আসবে এখনি।
-নাহ আজ আমি বৃষ্টিতে ভিজবো।
-আমার সাথে?
-হ্যা, তোর কোনো আপত্তি আছে?
-না না আপত্তি কেন থাকবে? তুই বললে তোর সাথে আমি এক হাজার বছরও বৃষ্টিতে ভিজতে পারি।
-পটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে? আমি কিন্তু তোর বয়সে বড়।
-ধ্যাৎ তুই যে কি বলিসনা শীলাপু, মাঝে মাঝে হাসি পায়।
কথা বলতে বলতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল, আমরা দুজন ছাদে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর শীলাপু, শীলাপু আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির ফোঁটা গুলো শীলাপুর মুখে পড়ছিল। আমি বিস্ময়ে সেই দৃশ্যটা দেখছি। একটা মানুষ এতটা সুন্দর কি করে হয়। শীলাপুকে ভীষণ জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। নাহ এই কাজটা করা মোটেই ঠিক হবেনা। ছি কি সব ভাবছি আমি, শীলাপু কি ভাববে। হয়তো আমার সাথে কথায় বলবে না আর।
-কিরে এই বাঁদর, এই ভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? মুখে বৃষ্টির পানি ঢুকবেতো।
-বৃষ্টির পানিতে তো জীবণু নেই শীলাপু, সমস্যা হবেনা।
-তাই না। খুব তো বুদ্ধিমান হয়ে গেছিস দেখছি।
আমি আর কিছু বললাম না, একটু হাসলাম শুধু, তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে পাশেই কোথায় যেন প্রচন্ড শব্দে বজ্রপাত হলো। আমরা দুজনেই কেঁপে উঠলাম। এরপর যেটা হলো সেটা আমি স্বপ্নও দেখিনি। শীলাপু প্রচন্ড শক্ত করে চেপে ধরে আছে আমাকে।
এরপর শীলাপু বেশ কদিন আর আমাদের এদিকে আসতো না। দেখা হলেই লজ্জা পেয়ে চলে যেত। কোনো কথায় বলতোনা। আমার খুব খারাপ লাগছিল। ইশ সেদিন কেন যে এমন হলো। কিন্তু আমার কি দোষ। শীলাপু ই তো। এখন আবার নিজেই কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।
আমারও কদিন ধরে মনটা খুব খারপা। শীলাপুকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কিভাবে দেখবো। থাক কাল কিছু একটা করতেই হবে। শীলাপু কেন কথা বলছে না জানতে হবে।
জানালায় কে যেন ঠকঠক করছে। রাত এখন আনুমানিক বারটা বাজে। বৃষ্টি পড়ছে। এই সময় কে আবার ডাকছে।
-কে?
কে যেন ফিস ফিস করে বললো। আমি জানালাটা খোল।
-আমি কে?
-ওই গাধা আমি শীলা।
তাড়াতাড়ি জানালা খুললাম। আমি তো রীতিমত আকাশ থেকে পড়লাম।
-আরে শীলাপু তুমি!
-এই গাঁধা এতো আপু আপু করিস ক্যান? বাহিরে আয়।
-কেন? এতরাতে কোথায় যাবে?
-আসতে বলছি আয়, গাধা একটা।
আমি ছাতা নিয়ে বাহিরে এলাম। দেখি শীলাপু ভিজে সারা।
-এই গাধা ছাতা এনেছিস কেন?
-বৃষ্টি হচ্ছেতো।
-যা ছাতা রেখে আয় বৃষ্টিতে ভিজবো।
আমি তো অবাক! শীলা আপুর কি মাথা ঠিক আছে।
--কি বলছো শীলাপু
-গাঁধা একটা যা বলছি তাই কর।
আমি ছাতা রেখে বাহিরে এলাম।
-আমার হাত ধর, চল পুকুর পাড়ে যাবো।
কিছু বললাম না শীলাপুর হাত ধরে পুকুর পাড়ে কদম গাছটার নিচে এসে দাঁড়ালাম। কদম গাছর নিজে দুজন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। এরপর শীলাপু আমাকে জিজ্ঞেস করলো।
-তুই কি আমাকে ভালবাসিস?
-আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
-কি হলো কথা বলছিস না কেন? গাধা একটা।
আমি হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলাম।
-গাধা এই কথাটা সাহস করে তো কোনোদিন বলতে পারিসনি। কি হতো বললে আহম্মক।
সাহস করে তাই আমিও জিজ্ঞেস করে ফেললাম।
-শীলাপু তুমিও কি আমাকে ভালবাসো।
-গাধাই রয়ে গেলি। ভাল না বাসলে কি এই ঝড় বৃষ্টির রাতে তোর সাথে লুডু খেলতে এসেছি।
কদম গাছের নিচে মধ্যরাতের টুপটাপ বৃষ্টিতে আমরা ভিজছি। গাছ ভর্তি কদমফুল। ফুলের গায়ে পড়া সেই বৃষ্টির পানি আমাদেরকেও ভিজিয়ে দিচ্ছে। এই বৃষ্টি ভালবাসার এই বৃষ্টি সুখের। আশেপাশে আবারও কোথায় যেন প্রচন্ড শব্দে বজ্রপাত হলো...........
রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭
আবার এসো এই বর্ষায়
Tags
# জীবনের গল্প
# প্রেমের গল্প
About Unknown
প্রেমের গল্প
লেবেলসমূহ:
জীবনের গল্প,
প্রেমের গল্প
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Post Top Ad
Author Details
গল্প পড়তে বা শুনতে কে না ভালোবাসে,সেই ছোট্ট বেলায় দাদির কোলে,নানির কোলে, বা অন্য কারো কোলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বা চোখ কান খাড়া করে, বৃষ্টি বা শীতের রাতে খাতা মুরি দিয়ে অথবা চাঁদনি রাতে উঠোনে বা ছাদে পাটি বিছিয়ে গল্প কিচ্ছা শুনেনি এমন কোন মানুষ পাওয়া যাবে না।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
HELLO! VISITOR